Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

রমজানে পারিবারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার সুযোগ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী 

এপ্রিল ২৯, ২০২১, ০৯:১০ এএম


রমজানে পারিবারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার সুযোগ

মা খাদিজার অন্দরমহল থেকে ইসলামের যাত্রা শুরু। ঐশী বাণী পেয়ে যখন হেরা সাধক মুহাম্মদ (সা.) ভয়ে জড়সড়, মহীয়সী খাদিজা তখন মিষ্টি হেসে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে বললেন, ‘ওগো প্রাণের স্বামী আমার! আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল। কোনো শয়তান কিংবা জিন আপনার কাছে ঘেঁষতে সাহস করবে না। আপনি একজন আলোকিত মানুষ। আপনার হূদয়ে মানুষের জন্য প্রেম ছাড়া আমি অন্য কিছু দেখিনি।’ সেই থেকে শুরু হয়ে আজ দেড় হাজার বছরে ইসলাম পৃথিবীর আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়েছে বীরের মর্যাদা নিয়ে। যেখানেই মুসলমানরা বসতি গড়েছে, সেখানেই শান্তি-সুখের অমিয় ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়েছে অবিরত।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মজবুত সম্পর্ক গড়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ করে দেয় মাহে রমজান। এ সময় মানুষের মন নরম থাকে, শয়তান বন্দি থাকে। পরিবারের কর্তা অর্থাৎ বাবা বা স্বামী যদি রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করে আদর্শ স্বামী ও বাবা হওয়ার চর্চা করতে পারেন, তাহলে হারানো শান্তির পায়রা আবার ফিরে আসবে আমাদের মুসলিম পরিবারগুলোতে। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী ‘হাকাজা কানান নাবিয়্যু ফি রামাদান’ গ্রন্থে রমজান মাসে পরিবারের সঙ্গে নবীজির আচরণ কেমন ছিল্তএ সম্পর্কে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন। 

সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, রাসুল (সা.) শুধু নিজের ইবাদত নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন না, পরিবারের লোকজনকে কিভাবে আল্লাহভীরু হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই চেষ্টাও তিনি জীবনভর অব্যাহত রেখেছিলেন। ফলে দেখা গেছে, নবীজির প্রিয় স্ত্রীরা পরে বড় বড় সাহাবির শিক্ষক হওয়ার মতো গৌরব অর্জন করেন।

আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজানের পুরো মাস রোজা রাখতেন। প্রতি রমজানে তাঁর ওপর নাজিল হওয়া পুরো কোরআন পড়তেন। যখন রমজানের শেষ দশক চলে আসত, তখন রাসুল (সা.) ইবাদতের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতেন। এ সময় তিনি স্ত্রীদেরও ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। ইবাদতে উৎসাহ দিতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৪৬ ও মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬৩০)

শুধু উৎসাহ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, রাসুল (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়েও ইবাদত করতেন। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে একসঙ্গে জামাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। কোনো কোনো দিন তিনি স্ত্রীদের ডেকে আনতেন এবং জামাতে দাঁড় করিয়ে দিতেন। আবু জর (রা.) বললেন, একদিন এত দীর্ঘ সময় রাসুল (সা.) আমাদের নিয়ে ইবাদত করলেন যে আমাদের মনে হলো সাহরির সময় বুঝি শেষ হয়ে এসেছে। (কিয়ামু রামাদান) 

রাসুল (সা.) পবিত্র স্ত্রীদেরও ইতিকাফের অনুমতি দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ইতিকাফের অনুমতি চাইলে রাসুল (সা.) আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি হাফসার জন্য অনুমতি চাইলে তাকেও অনুমতি দেওয়া হলো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৪৫) এমনও হয়েছে, ঋতুবতী স্ত্রীকে নিয়েও রাসুল (সা.) ইতিকাফ পালন করেছেন। 

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুল (সা.) একজন স্ত্রীকে নিয়ে ইতিকাফ করেন, অথচ সে ওই সময় হায়েজগ্রস্ত ছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৯) 

এসব হাদিস থেকে মুসলিম পুরুষদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় আছে। আমরা শুধু নিজেরাই ইবাদত করি; কিন্তু আমাদের অর্ধাঙ্গীদের ইবাদত করতে উৎসাহ দিই না এবং বেচারিদের সে সুযোগও করে দিই না। আমরা চাইলেই কিন্তু স্ত্রীদের কাজ ভাগাভাগি করে দুজনে একসঙ্গে ইবাদতে মগ্ন হতে পারি। এমন দম্পতিকে ফেরেশতারাও ঈর্ষা করবে। আর তাদের সন্তানরা হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সন্তান।

যারা মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম তো দূরের কথা, কখনো সামান্যতম কষ্টও দেবে না। হে আল্লাহ! আমাদের পরিবারগুলো শান্তি-সুখের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দিন। আমিন।

(লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি)

আমারসংবাদ/এডি