Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

রমজানে তওবা

ধর্ম ডেস্ক

মে ৬, ২০২১, ০৭:৩৫ এএম


রমজানে তওবা

মাগফিরাতের দশক চলছে। আল্লাহর কাছে মাগফিরাত বা ক্ষমা পাওয়ার জন্য আমাদের তওবা করতে হবে। তওবার শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গুনাহ থেকে ফিরে আসা। কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গুনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ়সংকল্প করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (সূরা আত তাহরীম-৮)

এখানে ‘আন্তরিক তওবা’ বলতে এমন তওবাকে বুঝানো হয়েছে, যা রিয়া ও নাম-যশ থেকে খাঁটি-কেবল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও আজাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গুনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গুনাহ পরিত্যাগ করা।

হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, বিগত কর্মের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার পাকাপোক্ত ইচ্ছা করাই ‘আন্তরিক তওবা’। হযরত কলবী রাহ. বলেন, ‘আন্তরিক তওবা’ হল মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গুনাহ থেকে দূরে রাখা।

হযরত আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করা হল, তওবা কী? তিনি বললেন, ছয়টি বিষয়ের একত্র সমাবেশ হলে তওবা হবে- 

১. অতীত মন্দকর্মের জন্যে অনুতাপ, 

২. যেসব ফরজ ও ওয়াজিব কর্ম তরক করা হয়েছে, সেগুলোর কাজা করা, 

৩. কারও ধন-সম্পদ ইত্যাদি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে থাকলে তা প্রত্যার্পণ করা, 

৪. কাউকে হাতে অথবা মুখে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার জন্যে ক্ষমা নেয়া, 

৫. ভবিষ্যতে সেই গুনাহের কাছে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প হওয়া এবং 

৬. নিজেকে যেমন আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করতে দেখেছিল, তেমনি এখন আনুগত্য করতে দেখা।

হযরত আলী রা. বর্ণিত তওবার উপরোক্ত শর্তসমূহ সবার কাছে স্বীকৃত। তবে কেউ সংক্ষেপে এবং কেউ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।

রমজান মাসে বিশেষ করে দ্বিতীয় দশক ও তৃতীয় দশকে তওবা করার এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু। অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে, এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা আন-নিসা-১৬-১৮) 

বান্দা কোন পাপকর্ম করার পর যখন ‘আন্তরিক তওবা’ করে, তখন তার পাপকর্মগুলো এমনভাবে মিটে যায়, যেন সে কোনদিন পাপকর্ম করেইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পাপকর্মের প্রকৃত তওবাকারীর অবস্থা এমন হয় যেন তার কোন পাপই নেই। বান্দার কাজই আল্লাহর কাছে তওবা করা। এই তওবা করতে হবে মৃত্যু আসার আগেই এবং সকল প্রকার অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করে। মৃত্যু কখন আসবে আমরা কেউ জানি না। তাই যাবতীয় পাপের বোঝা নিয়ে এখনই তওবা করতে হবে। এমন সুযোগ হয়তো আর নাও হতে পারে।

(লেখক : আরবি প্রভাষক,দারুল উলুম কাকরাইল, রমনা, ঢাকা)

আমারসংবাদ/এডি