নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১৫, ২০২০, ০৯:১০ এএম
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ ব্রীজ ও চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম মাদ্রাসা সংলগ্ন দুইটি স্থানের বধ্যভূমি আজও চিহ্নিত করা হয়নি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত অরক্ষিত রয়েছে গেছে উক্ত দুইটি বধ্যভূমি।
সেখানে নির্মাণ করা হয়নি কোনো ধরনের স্মৃতিস্তম্ব। ফলে ’৭১-এ পাক-বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে বহু বাঙালীর শহীদ হওয়ার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানায় রয়ে যাচ্ছে।
মুজিব শতবর্ষকে উপলক্ষ্যে করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণ সহ স্মৃতি স্তম্ব নির্মাণের জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, সুশীল সমাজ, নান্দাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের লোকজন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে উক্ত দুইটি স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার আলবদররা শত শত বাঙ্গালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফেলে রেখেছে।
নান্দাইল উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান নরসুন্দা নদীটি মশুল্লী ইউনিয়নের শুভখিলা গ্রাম ভেদ করে ময়মনসিংহ-ভৈরব রেললাইনের নীচ দিয়ে চলে গেছে। আর তার পাশেই কালীগঞ্জ বাজার রয়েছে।
সেই বাজারের নাম অনুযায়ী উক্ত রেলওয়ে সেতুটির নাম করা হয়েছে কালীগঞ্জ রেলসেতু (ব্রীজ)। এই ব্রীজে সংগ্রাম চলাকালীন বহু মুক্তিকামী বাঙ্গালি নারী-পুরুষ ও শিশুদের নির্যাতন সহ গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিতো পাকিস্তানি বাহিনী।
ওই সমস্ত মানুষের আর্ত চিৎকার ও গুলির শব্দে মানুষ আতংকে থাকতো সবসময়। আশপাশের বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়েছে পাকিস্তানিরা। এসময় মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতি যেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নিরীহ মানুষকে এনে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এবং তা স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো সময় ধরে চলতে থাকে।
শুধু তাই নয় উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারইগ্রাম মাদ্রাসার কাছের ইটভাটায় বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে লাশের উপর লাশ ফেলে রাখা হতো। এ দুটি বধ্যভূমিতে কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণা কয়েক হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। নান্দাইল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির বলেন, বধ্যভূমির কাহিনী খুবই হৃদয়বিদারক।
আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে উক্ত দুটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ব স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল আসনের সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন বলেন, বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ব স্থাপনের পক্রিয়া চলছে। আশা করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে মুজিব শত বর্ষ উপলক্ষ্যে শীঘ্রই বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ব স্থাপন করা হবে।
আমারসংবাদ/এআই