Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

যশোরে এগ্রোটেকের পোল্ট্রির ফিড খেয়ে হাজার হাজার মুরগির মৃত্যু

এম এ রহমান, যশোর

জানুয়ারি ১, ২০২১, ১০:৩৫ এএম


যশোরে এগ্রোটেকের পোল্ট্রির ফিড খেয়ে হাজার হাজার মুরগির মৃত্যু

যশোর অঞ্চলে ২২ জন খামারীর সর্বনাশ হয়েছে এগ্রোটেক কোম্পানির পোল্ট্রির ফিড খাওয়ানোর ফলে। ওই ফিড খেয়ে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মুরগি মারা গেছে। খাবারে গুনগত মান নিয়ন্ত্রণহী হয়ে পড়ায় এসব পোল্ট্রির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারীরা। 

হঠাৎ অনেক  মুরগির মৃত্যুর ফলে পূঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে তারা ওই কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে যশোরের কেশবপুরের বুড়িহাটি, আওয়ালগাতী, মহাদেবপুর, কাবিলপুর বগা, ধর্মপুর ও পাটকেলখাটা গ্রামের বিভিন্ন পোল্ট্রির খামারের গিয়ে দেখা গেছে, মুরগির পায়খানার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। 

পায়খানা না হওয়ায় যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এগ্রোটেক কোম্পানির পোল্ট্রির ফিড খাওয়ানোর ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান খামারীরা। তাদের দাবি ওই খাবার খাওয়ানোর পরপরই পোল্ট্রির শ্বাসকষ্ট হচ্ছে,পায়ের গিরা ফুলে যাচ্ছে ও পায়খানার নাড়ী সংকুচিত হয়ে মুরগি মৃত্যুর যন্ত্রনায় ছটফট করে অবশেষে মারা যাচ্ছে। 

বুড়িহাটি গ্রামের গাজী পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আছির উদ্দিন গাজী বলেন, ‘গত সপ্তাহে হঠাৎ তার খামারে মুরগি মারা যেতে থাকে। লক্ষ্য করে দেখা যায় মুরগি পায়খানা করতে পারছে না। পায়খানার যন্ত্রণায় মুরগি ছটফট করছে। এরপর লাফাতে লাফাতে মারা যাচ্ছে।  বিষয়টি মোবাইল ফোনে পশু চিকিৎসকদের জানানো হলে তারা কোন সমাধান দিতে পারেননি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে তারা বুঝতে পারেন নাই এগ্রোটেক কোম্পানী পোল্ট্রি ফিড খাওয়ার ফলে পোল্ট্রি মারা যাচ্ছে। পরে বুঝতে পেরে ওই খাবার বন্ধ করে দেন। কিন্তু তার আগেই খামারের  ২ হাজার পোল্ট্রি মারা গেছে। 

ওই মুরগির বয়স ছিল ৩৮দিন। ফিড খাওয়ানোর মুরগি ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই যার মৃত্যু হয়েছে। এতে তার প্রায় আড়াই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এগ্রোটেক কোম্পানীর ডিলাররা অবশিষ্ট খাবার খামার থেকে কৌশলে নিয়ে গেছে।’

খবর পেয়ে এগ্রোটেক কোম্পানীর স্থানীয় ডিলার ডিলার মিজানুর রহমান ও যশোর জেলা ডিলার শরিফুল ইসলাম বিভিন্ন খামারে যান। এসময় তারা খামারীদের সাথে কথা বলেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এগ্রোটেক কোম্পানীর স্থানীয় ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, ‘তারা জানতে পেরেছেন ২২টি খামারে একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার কারণে এগ্রোটেক ফিড কোম্পানীর খাবার সব খামারে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এগ্রোটেক ফিডের আরেকজন ডিলার বলেন, ‘আমিও এ খাবার বন্ধ করে দিয়েছি। এ খাবার খাওয়ানোর ফলেই পোল্ট্রির মৃত্যু হচ্ছে।’ 

বুড়হাটি গ্রামের খোদা বক্স সরদারের  ছেলে আব্দুল বনিন এর খামারে ১৩ মুরগির মধ্যে ৯শ’ মুরগি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই মারা গেছে।  বাকি ৪শ’ মুরগি তিনি নাম মাত্রমূল্যে দ্রিত বিক্রি করে দেন। 

একই অবস্থা হয়েছে আশপাশের প্রায় ২২টি মুরগির খামারে। একাধিক ফার্ম মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা সবাই এগ্রোটেক কোম্পানীল পোল্ট্রির ফিড খাওয়াতো। ওই কোম্পানীর একটি চালানে আসা খাবারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে এসব মুরগির মারা গেছে। ফলে কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ওই খাবার দ্রুত ডিলার ও খামারীদের কাছ থেকে অপসারণ করে ফেলেছেন।

স্থানীয় আওয়ালগাতী বাজারে অবস্থিত এগ্রোটেক কোম্পনীর  ডিলার ভাই ভাই এন্টারপ্রাজের সত্তাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিনি প্রতি মাসে ওই কোম্পানীর ৩০ টন পোল্ট্রির ফিড বিক্রি করেন। যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মুরগিকে খাওয়ানো হয়ে থাকে। আপাতত এ কোম্পানীর ফিড বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই এলাকার এগ্রোটেক কোম্পানীর সব ডিলার ইতোমধ্যে খাবার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।’ 

এদিকে যশোরে এগ্রোটেক কোম্পানীর খাবার খেয়ে হাজার হাজার মুরগির মৃত্যু ও তাদের ফিড বন্ধের খবর পেয়ে ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে এগ্রোটেক ফিড কোম্পানীর একটি বিশেজ্ঞ টিম গাজী পোল্ট্রির ফার্মসহ কয়েকটি খামার সরোজমিনে পরিদর্শন করেন। 

তারা মৃত্যু মুরগির পোস্টমটেম ও নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তবে খামারীদের এই ক্ষতিপূরণ ব্যাপারে তার কোন সাড়া দেননি।এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারীরা। এমনিতেই করোনার কারণে পোল্ট্রি খামারীদের বড় লোকসান হয়েছে। 

প্রায় ১ বছর যাবত তারা ন্যায্য মূল্যে পোল্ট্রি বিক্রি করতে পানেনি। তারপর হঠাৎ করেই আবার পেল্ট্রি ফিডের দাম বস্তা প্রতি দেড় থেকে ২শ’ টাকা বৃদ্ধি করেছে কোম্পানীগুলো। এতে খামারীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। 

এমন অবস্থায় খামারীরা যশোরের জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন। দাবী করছেন এগ্রোটেক কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের। 

আমারসংবাদ/এআই