Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ধামরাইয়ে ফের বেড়েছে ভণ্ড সাধুদের প্রতারণা

জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৭:২০ এএম


ধামরাইয়ে ফের বেড়েছে ভণ্ড সাধুদের প্রতারণা

ঢাকার ধামরাইয়ে ফের বেড়েছে ভণ্ড সাধুদের প্রতারণা। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল অনেক মানুষ। অনেক অবলা নারীরা হচ্ছেন ধর্ষণের শিকার। দিনদিন মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েই চলেছে ভন্ড সাধুদের দৌড়াত্ম। এ যেন দেখার কেউ নেই!

সম্প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় সাধুরা করোনাসহ সর্বরোগ সারানোর কথা বলে ঝাড়-ফুঁক, পানি পড়া আর তাবিজ কবচ দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। 

সম্প্রতি চৌহাট দক্ষিণপাড়া গ্রামের ওয়ারেছ মিয়ার ছেলে ভণ্ড কবিরাজ সালাম গুলজার এক গৃহবধূকে চিকিৎসার নামে ঘরে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে গ্রেপ্তারও হয়েছে।

জানা গেছে, ধামরাইয়ের চৌহাট গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র পালের ছেলে নিতাই চন্দ্র পাল ওরফে নিতাই ফকির যিনি বছর কয়েক আগেও এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতো। 

সেই নিতাই ফকিরই আজ মস্ত বড় সাধু হয়েছে। যিনি সর্বরোগের চিকিৎসা করেন ঝাড়, ফুঁক, আর তাবিজ-কবচ দিয়ে। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। 

তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়েছে ধামরাই, সাটুরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী  বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খালি গায়ে নারী পুরুষের চিকিৎসা করে থাকেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। 

জানা গেছে, নিতাই সাধু করোনাসহ বন্ধ্যা নারীদের সন্তান হওয়া, অল্প বয়সে চুল পাকা, চুল পড়ে যাওয়া, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভালো করা, প্রেমিক-প্রেমিকাকে পাইয়ে দেয়া, জ্বিন- ভূত তাড়ানো, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস, আমাশা, গ্যাস্ট্রিক, পিত্তথলিতে পাথর, প্যারালাইসিস, বাতের ব্যথা, হাঁপানি, যৌন দুর্বলতা, আলসার, স্বপ্নদোষসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করেন।

আর এতে রোগের ধরন দেখে চিকিৎসার ফি নিচ্ছেন মাত্র ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এসব কাজ করে তার এখন প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। 

এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন জানায়, নিতাই পালের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে এক যুবক তার (নিতাই ফকিরের) স্ত্রীকে নিয়েই পালিয়ে গেছে। যে নিজের স্ত্রীকে রাখতে পারে না সে আবার বশীকরণের চিকিৎসা কিভাবে করায়। তারা দ্রুত এসব ভণ্ডদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিতাই সাধুর বাড়িতে ভোর বেলায় তার ছাপরা ঘরের আস্তানার সামনে পানির বোতল হাতে নিয়ে ধামরাই, সাটুরিয়া, মির্জাপুর, নাগরপুর এলাকার কয়েকজন ১০০ টাকা হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। 

আর ছাপরা ঘরের ভেতরে আসর বসিয়ে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে খালি গায়ে নিতাই পাল রোগীদের ঝাড়-ফুঁক করছেন এবং আধা লিটার বোতলে পানি পড়া দিচ্ছেন। 

এছাড়াও যারা মাঝে মধ্যে পাগল হয়ে যান, তাদের দেয়া হচ্ছে তাবিজ-কবচ।

চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে নিতাই ফকিরের কাছে তার লেখাপড়া কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। তবে এখন শুধু নাম লিখতে পারি। 

একপর্যায়ে নিতাই পাল সাংবাদিকদের বলেন, অভাবের কারণে দুই বছর আগেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। এখন নিজ বাড়িতেই আসর বসিয়ে সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। পানিপড়া দিয়ে মানুষের কাছ থেকে যে টাকা পান তা দিয়ে তার অভাব দূর হয়েছে।

গত কয়েক বছর যাবৎ তিনি কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিনিয়তই প্রশাসনের চোখের সামনে এ প্রতারণা হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

আমারসংবাদ/এআই