Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

যেভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন জেসমিন

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৫:১০ এএম


যেভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন জেসমিন

মা-বাবার সংসারের অশান্তি থেকে বাঁচতে এবং নিজের লেখা-পড়া চালিয়ে নিতে ছোট ভাইকে নিয়ে মানিকছড়ি এসে এক প্রভাবশালীর ছেলের প্রেমে জড়িয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জেসমিন আক্তার।

তবে সেই সংসারেও সুখের দেখা পাননি তিনি। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েও নানা কারণে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে রাগে-ক্ষোভে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর মানিকছড়ির ভাড়াটিয়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

পুলিশ ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, জেসমিন লক্ষীছড়ি উপজেলার শীলছড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন ও জুলেখা দম্পতির মেয়ে। তার বাবা-মায়ের সংসার গত ২/৩ বছর আগে ভেঙে যায়। এরপর মা জুলেখাকে নিয়ে মেয়ে জেসমিন আক্তার ও ভাই জাহেদুল ইসলাম মানিকছড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। 

এদিকে কলেজ পড়ুয়া জেসমিন আক্তার ও এসএসসি পরিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলামের ভরণ পোষণে মা এক পর্যায়ে বিদেশে পাড়ি জমান। 

পরে মা-বাবা দুইজনের অগোচরে গত ৫/৬ মাস আগে মানিকছড়ির তিনটহরী এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে জোনায়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জাড়িয়ে পড়েন জেসমিন আক্তার। দুজনেই অভিভাবককে না জানিয়ে ৩/৪ মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধও হয়েছিলেন। এমনকি ভাড়া বাসায় ঘর সংসারও শুরু করেন। 

এ খবর জানাজানির পর ছেলের প্রভাবশালী পরিবার তাদের বিয়ে মেনে না নিয়ে উল্টো স্ত্রীর (জেসমিন) কাছ থেকে ছেলেকে সরিয়ে নিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। এমনকি কাবিন নামায় উল্লেখিত অর্থ ছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হলেও জেসমিনকে তালাক দিতে ছেলের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। 

এক পর্যায়ে জোনায়েদ হোসেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার সুয়াবিলে আত্মগোপন করেন। এ খবর জানতে পেরে জেসমিন সেখানেও যান। স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে সেখানে বৈঠকও করেন। অতঃপর সবকিছুতে তিনি ব্যর্থ হন। পরে বারবার সামাজিক বিচারবঞ্চিত ও শ্বশুর পক্ষের অমানবিক আচরণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন জেসমিন।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর মানিকছড়ির মাস্টার পাড়ার ভাড়াটিয়া বাসায় ছোট ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জেসমিন আক্তার। পরে দীর্ঘক্ষণ ওই ঘরে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। 

পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে জেসমিনকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক ডা. মহিউদ্দিন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের পিতা আলমগীর হোসেন বলেন, ২ বছর আগে আমার ১ম স্ত্রী জোলেখার ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে আমার এক মেয়ে-ছেলেকে নিয়ে সে মানিকছড়িতে থাকতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সে (স্ত্রী) বিদেশে পাড়ি জমায়। গতকাল আমার মেয়ের অকাল মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সত্যি আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। 

মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আমির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মা-বাবা থেকে দূরে থাকা জেসমিন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও শ্বশুর পক্ষের কেউ এ বিয়ে মেনে নেননি। পরে স্বামীর সঙ্গে মতের অমিল, অধিকার বঞ্চিত হয়ে এক পর্যায়ে রাগে ক্ষোভে জেসমিন আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

আমারসংবাদ/জেডআই