Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ভৈরবে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষে লাভবান কৃষকরা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৭:৪০ এএম


ভৈরবে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষে লাভবান কৃষকরা

ভৈরবে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। এখানকার আহরিত মধূ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া মৌমাছি চাষীদের কাছ থেকে মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিতে স্থানীয়রা প্রতিদিন খামারে আসছেন।

বাংলাদেশ মৌচাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও নির্বাহী পরিচালক জানান, আরডিসি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৭ হাজার লোক মৌমাছি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ হাজার মৌমাছি চাষী সারাদেশে সরিষা ক্ষেতে বক্সের মাধ্যমে মধূ সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। 

ভৈরবের মাঠে প্রান্তরে এখন হলুদের সমারোহ। চারিদিকে সরষে ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মন জুড়ে যায়। আর প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌমাছি চাষীরা মৌ বক্স নিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। সরিষা ক্ষেতে মৌ বক্সের মাধ্যমে প্রতিদিন মধু আহরণ করছে চাষীরা। তাদের আহরিত মধু বিভিন্ন এলাকার লোকজন কিনে নিচ্ছে। 

শুধু তাই নয় এলাকার অনেকেই মৌমাছি চাষ করতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মৌচাষীদের কাছ থেকে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন মৌমাছি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। মৌমাছি চাষ একটি লাভজনক খাত। যে কোনো বেকার যুবক মৌমাছি চাষ করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। 

তাছাড়া মৌমাছি চাষ করে ফুল থেকে খাটিঁ মধুর চাহিদা থাকায় এর দাম বেশি হওয়ায় প্রতিবছর ভৈরবে মৌমাছি চাষ বাড়ছে।  

চলতি বছর ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ও আগানগরসহ বেশ কয়েকটি সরিষা ক্ষেতে ১০ জন মৌচাষী ২শ ৫০টি বক্সের মাধ্যমে মধু আহরণ করছে। 

প্রতিমাসে গড়ে একেকটি খামার থেকে ৩/৪ মণ মধূ সংগ্রহ করছে। তাছাড়া স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনূকুলে  থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে এর দর ও ভালা হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করছেন।

তবে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষের ফলে ফসলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই কম হয় এবং সরিষায় পরাগায়নের ফলে ফলন ভালো হয়। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ২২শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আগামীতে এর চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষি অফিস আশা করছেন।

কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের সরিষা চাষী শাহিন মিয়া,ইদ্রিছ মিয়া,আক্কেল আলীসহ অনেকেই জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। 

বাজারে এর দর ও ভালা হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করছেন। তবে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষের ফলে ফসলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই কম হয় এবং সরিষায় পরাগায়নের ফলে ফলন ভালো হয়েছে। 

কালিকা প্রসাদ ও আগানগর ইউনিয়নের মৌমাছি খামারে মৌচাষ করে মধূ আহরণ দেখতে ও  প্রশিক্ষণ নিতে আসা বেকার যুবক আলমগীর হোসেন ও ফয়সাল মিয়া সহ কয়েকজন তরুণ জানান, তাদের গ্রামে দূর-দুরান্ত থেকে অনেকেই মৌমাছি চাষ দেখতে আসে এবং মধূ কিনে নেয়। আমরা ও মৌমাছি চাষ দেখতে ও শিখতে এসেছি। কারণ এটি একটি লাভজনক পেশা। এটি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার সূত্রধর জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে এবং আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ভৈরবে বারি ১৪-ও ১৫ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। অল্প খরচে অধিক ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুকছেঁ। 

তাছাড়া সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষের কারণে সরিষায় পরাগায়ন ঘটেছে। যার ফলে কোনো প্রকার পোকাঁমাকড় বা রোগবালাই না থাকায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে এর আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা  ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত সারাদেশে ৭ হাজার লোক মৌমাছি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ হাজার মৌমাছি চাষী সারাদেশে সরিষা ক্ষেতে বক্সের মাধ্যমে মধূ সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। সরিষা থেকে খাটি মধূ সংগ্রহ করে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

তাছাড়া মৌমাছি চাষে খামারিদেরকে কারিগরি ও যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে এবং যারা প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক তারা যদি মৌচাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ কওে তাহলে তাদেরকে প্রশিক্ষণ সহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এছাড়া ভৈরব সরিষার ভান্ডার বলে এখানে চলতি মৌসুমে ৮/১০টি খামারি বক্সের মাধ্যমে মৌচাষ করে লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে এটি একটি লাভজনক কুটির শিল্পে পরিণত হচ্ছে।

আমারসংবাদ/এআই