Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাইডেন প্রশাসনে নান্দাইলের যুবক জাইন, গ্রামে আনন্দের বন্যা

নান্দাইল প্রতিনিধি (ময়মনসিংহ)

জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৭:৪০ এএম


বাইডেন প্রশাসনে নান্দাইলের যুবক জাইন, গ্রামে আনন্দের বন্যা

যুক্তরাষ্টের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস প্রশাসনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ কার্যালয়ের জৈষ্ঠ্য উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি যুবক ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলের জাইন সিদ্দিকী। বাংলাদেশী-আমেরিকান হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চ পদে এর আগে আর কোন বাংলাদেশি নিয়োগ পায়নি। 

জাইনের পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মাদারীনগর গ্রামে। গত বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে কয়েকজনের নাম ঘোষণা করেন; সেখানে ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার পদে ৩০ বছর বয়সী জাইন সিদ্দিকী নিয়োগ পায়া। এতে তার গ্রামের বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। 

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন ছুটে আসছে জাইনের গ্রামের বাড়িতে। তাঁর জন্য শুভ কামনা জানিয়ে গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিল সহ মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। সবাই বলছেন, জাইন সিদ্দিকী শুধু নান্দাইলের নন, ময়মনসিংহের গর্ব, দেশের গর্ব তথা বাংলাদেশের গর্ব। 

[media type="image" fid="106407" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

জাইন সিদ্দিকী মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী ওরফে মামুন ও হেলেনা সিদ্দিকী চিকিৎসক দম্পতির একমাত্র ছেলে। প্রায় ৩৩ বছর আগে তাঁরা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই নাগরিকত্ব পেয়ে বসবাস করছেন তারা। সেখানেই জন্ম হয় জাইনের। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন তার দাদি মাজেদা আক্তারও। দাদা আবু বক্কর সিদ্দিক মারা গেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বেড়ে উঠেন জাইন সিদ্দিকী। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা জাইন বর্তমানে বাইডেন-কমলা ট্রানজিশন টিমে অভ্যন্তরীণ ও অর্থনৈতিক টিমের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গত বছর কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের প্রস্তুতি টিমের সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি বেটো ও’রোরকের প্রেসিডেনশিয়াল প্রচারদলের ডেপুটি পলিসি ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি সিনেট ক্যাম্পেইন টিমের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার হিসেবেও কাজ করেছেন। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এলেনা কাগান, ডিসি সার্কিটির আপিল আদালতের বিচারক ডেভিড ট্যাটেল ও ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিচারক ডিন প্রেগের সনের অধীনে ল ক্লার্ক হিসেবেও কাজ করেছেন জাইন। 

চার বছর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন জাইন সিদ্দিকী। বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে তার পরিবারের কেউ থাকেন না। বাড়িতে থাকেন তার চাচাতো ভাই ও বংশের অন্যরা। তাদের একজন রতন সিদ্দিকী। তিনি জানান, জাইনের বাবা টেলিফোন করে ছেলের বাইডেন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়ার খবর জানিয়েছেন। পদটি কী, তা না বুঝলেও তারা এটা বুঝতে পেরেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের প্রেসিডেন্টের প্রশাসনে দায়িত্ব পাওয়া অনেক বড় গর্বের, অনেক সম্মানের।

জাইন সিদ্দিকীর আরেক চাচা বাক্কী মিয়া জানান, চার বছর আগে জাইনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী। তারা বাড়িতে এক দিন ছিলেন। পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছেন। জাইনের তিন চাচি বিমলা, লুৎফুন্নাহার ও হেলেনা খাতুন জানান, শেষবার বাবার সঙ্গে জাইন যখন বাড়িতে আসেন, আধাপাকা টিনশেড ঘরে রাত যাপন করেছেন সাদাসিধাভাবে। খেয়েছেন নিজেদের হাতে রান্না করা বাংলাদেশি খাবার। সেই সাথে বাড়ির পাশের নরসুন্দা নদীতে চড়েছেন নৌকায়। 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাইনের বাবা মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী টেলিফোনে আমার সংবাদ'কে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ পদে জাইন নিয়োগ পেয়েছে তার নিজের যোগ্যতায়। এত বড় একটি পদে তার নিয়োগ পাওয়াটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের যেমন গর্বের, তেমনি নান্দাইল, ময়মনসিংহ তথা দেশের সব মানুষেরই গর্বের। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, যেন সে তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে দেশের সম্মান আরো বাড়াতে পারে।’ 

তার এই সাফল্যে নান্দাইল উপজেলার সুশীল সমাজের ব্যক্তিমহল, রাজনৈতিক, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সহ সর্বস্তরের পেশাজীবী, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে জাইনকে।


আমারসংবাদ/এমএ