Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

খালিয়াজুরীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিতরণে অনিয়ম

জানুয়ারি ২৮, ২০২১, ০২:৪০ পিএম


খালিয়াজুরীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিতরণে অনিয়ম

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন উপকারভোগী ও স্থানীয়রা। এ প্রকল্পে উপজেলায় ৪৪৩ টি ঘর নির্মাণ করা হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী প্রতি ঘরের মালামাল পরিবহন বাবদ সাত হাজার ৩০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ফলে  ৪৪৩টি ঘরের পরিবহন খরচ নেয়া হচ্ছে ৩২ লাখ ৩৩ হাজার নয়শত টাকা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপহারের ঘর বিনা খরচে তাদের পাবার কথা। তবে এখন ঘরের মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে নিজ খরচে। এতে তাদের ব্যয় হচ্ছে সাত হাজার তিনশত টাকা করে।

বিষয়টি উল্লেখ করে এর অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার রোয়াইল গ্রামের রবীন্দ্র সরকারসহ বেশ কয়েকজন।

রবীন্দ্র সরকার, জনু সরকার, প্রজিত চৌধুরীসহ অন্য অভিযোগকারীরা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আগে বলেছিলেন ঘর নির্মাণে তাদের কোনো খরচ লাগবে না, সব খরচ সরকার দিবে। এখন ঘরের মালামাল অনেক দূরে এনে ফেলে রাখা হয়েছে। পরিবহনের খরচ তাদের বহন করতে হচ্ছে।  তারা একই এলাকার ৩৩ জন মিলে মালামাল পরিবহন করেছেন। জনপ্রতি সাত হাজার তিনশত টাকা করে ব্যয় হয়েছে বলে জানান তারা।

তারা বলেন, ‘ইউএনও বলছেন, পরিবহন খরচ না দিলে ঘর অন্য জায়গায় চলে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে কেউ ধার করে, কেউ আবার সুদে টাকা এনে পরিবহন খরচ মিটিয়েছে। কি করব? ঘরতো লাগবে, আমাদের যে ঘর নাই।’ 

তাদের অভিযোগ, প্রতি ঘর নির্মাণের জন্য ৫০ বস্তা সিমেন্ট দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। এখন ৩৫ বস্তা করে সিমেন্ট দিয়েছে। এমনকি রাজমিস্ত্রিদের খাওয়া দাওয়া নিজেদের করাতে হচ্ছে।

উপকারভোগী হিসেবে নিবন্ধিত তালিকা সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি অফিসে কর্মরত কর্মচারীদেরও দেয়া হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সরকারি ঘর। খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদে কর্মরত এম এল এস এস পদে মো. হাবিবুর রহমানের জায়গা জমি থাকার পরেও ভূমিহীন ও গৃহহীনের ঘর তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই পদে থাকা মো. মাহবুব মিয়ারও সরকারি ঘর জুটেছে হাওর মালেক সিটিতে। উপজেলা পরিষদে সুইপার পদে চাকরিরত বিকাশ চৌধুরী (ছোট্টো)।  তার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা; জায়গা জমি থাকার পরেও তার নিজ নামেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সরকারি ঘর।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইউএনও গরু দেখাশুনা করেন মো: বিল্লাল ও আকির মিয়া। তাদেরকেও দেওয়া হয়েছে সরকারি ঘর। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসে টেকনিশিয়ান পদে কর্মতর মাসুদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়ার জায়গা জমিসহ বড় ঘর থাকার পরেও তাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দেওয়া হয়েছে। ইউএনও'র বাসার কাজের মহিলা চায়না রানীও সরকারি ঘর পেয়েছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব আহমেদ বলেন, অনিয়মের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সবকিছু সঠিকভাবেই দেয়া হচ্ছে।

খালয়িাজুরীরর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘরের জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে না। ঘরের মালামাল পরিবহনের খরচ তারা নিজেরা বহন করছেন। তবে এই পরিবহন খরচ হাজার দেড়েকের বেশি হওয়ার কথা নয়। উপজেলা চেয়ারম্যান নাম ঠিকানা দেখে দিয়েছেন, ফলে এই প্রকল্পে ঘর বিতরণে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। একটি চক্র বিভিন্ন অনিয়ম তুলে এ বিষয়টিকে বিতর্কিত করতে চাইছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি অফিসে যারা চাকুরি করেন এমন যে কয়জন ঘর পেয়েছেন তারা সবাই মাস্টার রোলে কর্মরত। তারা দরিদ্র তাই পেতে পারেন। আর চায়না রানী তার বাাসায় কাজ করেন না, কারণ তিনি পরিবার সহ থাকেন না। তাই বাসায় কোন কাজের মহিলা নেই। চায়না রানী কৃষি অফিসে ঝাড়ু দেন বলে জানান তিনি।

 

আমারসংবাদ/এমএ