Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

টাকা ছাড়া মিলে না বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রত্যয়নপত্র

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ (রংপুর)

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১, ১১:১০ এএম


টাকা ছাড়া মিলে না বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রত্যয়নপত্র

রংপুরের বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মু. মাজেদ আলী খান বাধ্যতামূলক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন। তার কাছ থেকে স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র নেয়ার আগে ওই শিক্ষার্থীকে রশিদমূলে স্থানীয় কৃষি ব্যাংকে ১০০ টাকা করে জমা দিতে হচ্ছে। এরপর ব্যাংকের জমা রশিদসহ প্রত্যয়নের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করতে হচ্ছে অধ্যক্ষের বরাবরে। 

টাকা জমা দেয়ার এবং আবেদনের দুই থেকে পাঁচদিন পর মিলছে অধ্যক্ষের প্রত্যয়নপত্র। হয়রানির শিকার এবং টাকা দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীরা প্রত্যয়নপত্র নিচ্ছেন। কারণ ওই প্রত্যয়ন ছাড়া গরীব,  অসহায়, দুস্থ্য, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিশেষ মঞ্জুরি হিসেবে আবেদন করতে পারছেন না। 

উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে,  সরকার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পরিচালন বাজেট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ মঞ্জুরি হিসেবে বরাদ্দকৃত অর্থ উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে বিতরণের লক্ষ্যে “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের জন্য অনুসরণীয় নীতিমালা (সংশোধন-২০২০)” জারি করেছে।

ওই মঞ্জুরি/অনুদান প্রাপ্তির জন্য মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়–য়া শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন শুরু হয়েছে গত ১ ফেব্রুয়ারি। আবেদনের শেষ তারিখ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। বিশেষ মঞ্জুরি প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রধিকার পাবে দুরারোগ্য ব্যাধি, দৈব দুর্ঘটনা, গরীব,  অসহায়, দুস্থ্য, মেধাবী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা। 

অনলাইনে আবেদন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামুলক। এই টাকা পাওয়ার আশায় কমবেশি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীই আবেদন করছেন। 

আর এই সুযোগ নিয়েছেন বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মু. মাজেদ আলী খান। মাজেদ আলী খান প্রত্যয়নপত্র দেয়ার আগে টাকা নেয়ার বিষয়টি কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি টাকা হাতে নিচ্ছি না। 

কলেজের উন্নয়ন করার স্বার্থে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০০ টাকা কলেজ ফান্ডে রশিদমূলে ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রত্যয়নপত্র নিতে বলেছি।’ 

এই টাকা নেয়ার নিয়ম আছে কি না-জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এসব ধরলে কি চলবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় টাকা দিবে গরীব-অসহায়দের। আর প্রত্যয়নপত্র নিতে আসছেন সচ্ছল ও ধনী মানুষের সন্তানেরাও। টাকা নেয়ার কারণ হচ্ছেন যাতে এই মানুষের সন্তানেরা প্রত্যয়নপত্র নিতে না আসেন।’ 

বুধবার পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে- এমন বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘মনে নাই। তবে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি।’

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই কলেজে দেখা যায়, প্রত্যয়ন নিতে অনেক শিক্ষার্থী সেখানে ভীড় করছেন। এর মধ্যে কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী নুরবানু, আরমান হোসেন, জেসমিন, নুর মোহাম্মদ, নুর আমিনসহ অন্তত ১৫জন শিক্ষার্থী ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রত্যয়নের জন্য ১০০ টাকা রশিদ মুলে কৃষি ব্যাংক বদরগঞ্জ শাখায় জমা দিয়েছেন। ওইদিনে তারা ওই রশিদের কপিসহ প্রত্যয়নের জন্য অধ্যক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন। 

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তাদেরকে সেই প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন অধ্যক্ষ। শাহানাজ পারভীন নামে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রত্যয়নপত্র নিতে আজ ব্যাংকে ১০০ টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাকে আগামী শনিবার প্রত্যয়নপত্র নিতে কলেজে আসতে বলেছেন কর্তৃপক্ষ। ১০০ টাকার জমা রশিদ নিয়ে ওই ছাত্রী কলেজ ত্যাগ করেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ এক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ‘অধ্যক্ষ এর আগে বিভিন্নভাবে কলেজ ফান্ডের ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অধরা রয়েছেন অধ্যক্ষ।

ওই কলেজের দুই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলার কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রত্যয়নে টাকা নিচ্ছে না। শুধু আমাদের প্রধান বাধ্যতামুলক টাকা নিচ্ছেন। এক মাসে অধ্যক্ষ প্রত্যয়নপত্র ব্যবসা করছেন লক্ষাধিক টাকা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রত্যয়নে টাকা নেয়ার বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। বিষয়টি এখনই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে দেখা হবে।’

আমারসংবাদ/এআই