Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

চিকিৎসকের বাসায় গৃহকর্মীর উপর অমানুষিক নির্যাতন

উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৯:৪০ এএম


চিকিৎসকের বাসায় গৃহকর্মীর উপর অমানুষিক নির্যাতন

রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) রেজিস্ট্রার ডা. সিএইচ রবিনের স্ত্রী রাখি রানী দাসের বিরুদ্ধে এক শিশু গৃহকর্মীকের অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে অব্যাহত ওই নির্যাতনে শিশুটির দুই হাত, হাতের আঙ্গুল, মাথা, গলা, মুখম-ল ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে অসংখ্য ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে (১১) বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রাম থেকে পুলিশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। 

শিশু নিপা ওই গ্রামের প্রতিবন্ধী ননী বাড়ৈর মেয়ে এবং অভিযুক্ত রাখি রানী দাস একই উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ডা. সিএইচ রবিনের স্ত্রী। 

নির্যাতিতা শিশুর স্বজনরা জানিয়েছেন, শিশু নিপার বাবা প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিপার জন্মের পরই স্বামী-সন্তান ছেড়ে মা অন্যত্র সংসার সাজিয়েছে। এরপর থেকে মা হারা শিশু নিপাকে নিয়ে প্রতিবন্ধী বাবার সংসার চলতো অর্ধাহারে-অনাহারে। বাবা ও তার স্বজনদের কাছেই নিপার বেড়ে ওঠা। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার পর মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে অচল সংসারের অনটন আরও বেড়ে যায়। তখন শিশু নিপাকে স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব হালদারের মাধ্যমে ডা. সিএইচ রবিনের রাজধানীর শ্যামলীস্থ বাসায় কাজে দেওয়া হয়। বাসুদেব হালদার ওই চিকিৎসকের চেম্বারের সহকারি। 

শিশুটির চাচী মুক্তি বাড়ৈ জানিয়েছেন, নিপাকে ছয় মাস আগে ডা. রবিনের বাসায় কাজে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই নিপার ওপর নির্যাতন শুরু করে রবিনের স্ত্রী রাখি দাস। নিপার মুখমন্ডল থেকে শুরু করে পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্নের অভাব নেই। শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা ও আঘাতের বহু চিহ্ন রয়েছে। এমনকি মাথায় কুপিয়ে জখমও করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের অমানুষিক নির্যাতনকারীর কঠোর বিচার চাই। 

নির্যাতিতা শিশু নিপা বাড়ৈ জানায়, বাসার কোন কাজে সামান্য ভুল-ত্রুটি হলেই ডাক্তার সাহেবের স্ত্রী (রাখি দাস) তাকে চুল ধরে চড়-থাপ্পড় মারতো। কখনও খুন্তি, কখনও চামচ দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করতো। তখন চিৎকার দিলে গলা চেপে ধরে অথবা চুল ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকাতো। ভয়ে মারধরের কথা ডাক্তার সাহেবের কাছেও বলতে পারিনি। মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদু ও কাকারা ফোন দিলে ডাক্তারের স্ত্রী রাখি মারধরের কথা না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখাত। 

শিশুটি আরও জানায়, কাজে সামান্য ভুল হওয়ায় সর্বশেষ গত রোববার তার ওপর ডাক্তারের স্ত্রী অমানুষিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে মাথায় ধারালো চাকু দিয়ে কোপ দিলে নিপা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ হলে কাউকে কিছু না বলার শর্তে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিপাকে গোপনে ডা. রবিনের চেম্বারের সহকারী বাসু হালদারকে দিয়ে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারী রাখি দাস। তবে বাসু হালদার নিপাকে পরিবারের কাছে পৌঁছে না দিয়ে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশের একটি চায়ের দোকানের সামনে ফেলে রেখে চলে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে ঘটনা সম্পর্কে নিপা তার স্বজনদের সবকিছু জানায়। 

উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন, ঘটনাটি অমানবিক। গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টার দিকে খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় ওই চিকিৎসকের বাড়ির ঠিকানা খুঁজছি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। 

এদিকে অভিযুক্ত রাখি দাসের স্বামী ডা. সিএইচ রবিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ‘একজন ভালো চিকিৎসক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় একটি মহল ওই শিশুটিকে ব্যবহার করে গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।’

অপরদিকে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু নিপার শারিরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী জানান, ‘শিশুটির মাথায় যে কুপিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে তা প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন আগের। এছাড়া শরীরের অন্যান্য আঘাতের ক্ষতগুলো অনেক পুরোনো। আর সেগুলো ধাতব দন্ড এবং নক দিয়ে করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও জানান, ‘ওই শিশুর শরীরের আঘাত দেখে ধারণা করা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই সে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে শারিরিকভাবে শিশুটি অনেকটা সুস্থ। তবে তার মানসিক ক্ষত ঠিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’

আমারসংবাদ/কেএস