Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

স্ত্রীর কারণে ফেঁসে গেলেন চিকিৎসক রবিন

জহির খান, উজিরপুর (বরিশাল)

মার্চ ৪, ২০২১, ০৩:০০ পিএম


স্ত্রীর কারণে ফেঁসে গেলেন চিকিৎসক রবিন

চিকিৎসা সেবায় মানবতার অনন্য নজির স্থাপনকারী বরিশালের উজিরপুরের ওটরা ইউপির গজালিয়া গ্রামের সন্তান এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) অর্থোপেডিক-ট্রমা সার্জন ডা. সিএইচ রবিন চন্দ্র হালদার। তিনি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অত্যন্ত সুখ্যাতির সাথে নিজ উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নানারোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। অসুস্থ রোগীদের সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের মনে বেশ আস্থাভাজন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ডা. সিএইচ রবিন চন্দ্র হালদার। 

সম্প্রতি স্ত্রী রাখি সাহার অপকর্মের কারণে শিশু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর একটি ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন নিরপরাধ এই মানবিক চিকিৎসক। এ ঘটনার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে ডা. সিএইচ রবিনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত রাখি সাহার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েও অনেকে লেখা পোস্ট করেছেন। 

এর মধ্যে নাজমুল হক মুন্না নামে স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী ডা. সিএইচ রবিনের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ডা. সিএইচ রবিন উজিরপুরের মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবায় একজন সেবক হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের মামলা হয়েছে। ডা. রবিন গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন করতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ ডা. রবিনকে কাছ থেকে যতটুকু জানি, তিনি শুধু একজন ভালো চিকিৎসকই নন, তিনি একজন ভালো মানুষ। ডা. রবিন চিকিৎসা সেবায় মানবতার এক মহানায়ক। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে তার স্ত্রী যদি গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন করে থাকেন, তাহলে তার স্ত্রীকে আইনের আওতায় আনা হোক এবং ডা. সিএইচ রবিনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’ 

এছাড়াও স্থানীয় অনেক সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানবিক চিকিৎসক রবিনকে নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একই সাথে চিকিৎসক রবিনকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার স্ত্রী অভিযুক্ত রাখি সাহাকে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আনার দাবি করেছেন। 

অপরদিকে চিকিৎসক রবিনের সম্পর্কে তার নিজ বাড়ির এলাকায় খোঁজ নেওয়া হলে সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, চিকিৎসা সেবায় ডা. রবিনের যে সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি চক্র রবিনকে ফাঁসাতে দীর্ঘদিন ধরেই গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাদের ধারণা চিকিৎসক রবিনকে মামলায় আসামি করা সেই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। 

এ বিষয়ে কথা বলতে ডা. সিএইচ রবিন চন্দ্র হালদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়। 

প্রসঙ্গত, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী ননী বাড়ৈর মেয়ে নিপা বাড়ৈকে (১১) স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব হালদারের মাধ্যমে ছয় মাস আগে ডা. সিএইচ রবিন চন্দ্র হালদারের রাজধানীর শ্যামলীস্থ বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ডা. সিএইচ রবিনের অনুপস্থিতিতে স্ত্রী রাখি সাহা বিভিন্ন সময়ে শিশুটির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ওই নির্যাতনে শিশুটির দুই হাত, হাতের আঙ্গুল, মাথা, গলা, মুখমন্ডল ও পিঠসহ বিভিন্নস্থানে অসংখ্য ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কাজে সামান্য ভুল হওয়ায় সবশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি শিশু নিপার ওপর রাখি সাহা অমানুষিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে রাখি সাহা ধারালো চাকু দিয়ে মাথায় কোপ দিলে নিপা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। 

পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ হলে কাউকে কিছু না বলার শর্তে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিপাকে গোপনে ডা. রবিনের চেম্বারের সহযোগী বাসু হালদারকে দিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারী রাখি দাস। তবে বাসু হালদার পরিবারের কাছে পৌঁছে না দিয়ে নিপাকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশের একটি চায়ের দোকানের সামনে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে ঘটনা সম্পর্কে নির্যাতিতা শিশু নিপা তার স্বজনদের সবকিছু জানায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নির্যাতিতা শিশু নিপার স্বজনদের কতিপয় লোকজন হুমকি দিলে হাসপাতাল থেকে নিপাকে নিয়ে পালিয়ে যান স্বজনরা। 

পরে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উজিরপুর থানা পুলিশ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নির্যাতিতা নিপাকে তার চাচা তপন বাড়ৈর শ্বশুর বিমলের বাড়ি পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার আশকর গ্রাম থেকে উদ্ধার করে। এরপরই সন্ধ্যায় নির্যাতনের শিকার শিশু নিপার চাচা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় নির্যাতনকারী রাখি সাহাকে প্রধান আসামি এবং তার স্বামী ডা. সিএইচ রবিনসহ তার চেম্বারের সহকারি বাসুদেব হালদারকে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস