Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

জৈন্তাপুরে কৃষক-সূর্যমুখীর রঙিন হাসি

আব্দুল হালিম, জৈন্তাপুর (সিলেট)

মার্চ ৭, ২০২১, ০৫:৫৫ এএম


জৈন্তাপুরে কৃষক-সূর্যমুখীর রঙিন হাসি

বাংলাদেশর পর্যটন অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সিলেটের জাফলং। সাদা পাথরের ভোলাগঞ্জ। হযরত শাহজালাল ও শাহ পরান (রঃ)’র মাজার, বিভিন্ন চা বাগান, খাসিয়া জনগোষ্ঠির সংস্কৃতি, নীল নদ খ্যাত লালাখাল সহ জৈন্তিয়া রাজ্যের পূরাকীর্তি, যা এক নজরে অবলোকন করতে আসা মানুষ’র দৃষ্টি এখন জৈন্তাপুর এলাকার সূর্যমুখী ফুলের বাগানগুলোতে। 

স্থানীয় কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল সূর্যমুখী ফুলের বাগানে এখন প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। 

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা এখন ফুলের স্বর্গরাজ্য, যে কারো মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে সূর্যমুখীর হাসিতে। মনে হবে এ যেনো এক ফুলের স্বর্গরাজ্য। নীলনদ নামে খ্যাত সারী নদীর তীরে আগফৌদ গ্রামে সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে মনোরম পরিবেশে শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুলের বাগান। এই বাগান ফুলের বাগান দূর থেকে যে কোন বয়সী মানুষের মন কেড়ে নিতে পারে। 

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে ঝর্ণা বেষ্টিত নীলনদী নামে খ্যাত সারী নদীর পাশে প্রকৃতির এক নৈসর্গিক সৃষ্টি সূর্যমুখী ফুলের বাগান। 

প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর জৈন্তাপুর উপজেলা, আর মাঠ হয়েছে রঙিন সূর্যমুখী ফুলে। সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমূখী চাষ করেছে স্থানিয় চাষিরা। 

সূর্যমুখী চাষের ফলে অনেকের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিক্রি করে এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বাণিজ্যিকভাবে অনাবাদী জমিতে সূর্যমুখী চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারাও।

তাছাড়া এই ফুল চাষে লাভের সম্ভাবনা বেশি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। সিলেটের মাটিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করার লক্ষ্যে বিগত চার বছর যাবৎ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গবেষণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউ সিলেট শাখার গবেষকরা।

উপজেলার বিভিন্ন সূর্যমুখী প্রদর্শনী জমিতে গিয়ে দেখা যায়, হলুদ ফুলের সমাহারে এক একটি নয়নাভিরাম দৃশ্য। আশে পাশের সুন্দর ও বিনোদন পিপাসু মানুষরা বিকাল বেলায় তাদের স্বজনদের নিয়ে সূর্যমুখী প্রদর্শণীতে ভিড় জমাচ্ছে। 

দেখতে মনে হয় ফসলী জমি নয়, এক দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। গত পৌষ মাসের প্রথম দিকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। একটি পরিণত সূর্যমুখী ফুলের গাছ ৯০ দিন থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই কৃষকরা বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। 

যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তবে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। ১ মণ বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। সূর্যমূখীর তেল ছাড়াও এ থেকে পাওয়া খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছগুলো জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। 
এর কোনো অংশই ফেলে দেওয়ার মত নয়। 

জৈন্তাপুর উপজেলার আগফৌদ গ্রামের কৃষক কামাল আহমদ জানান, আবুল ফয়ছল, সুলতান আহমদ, মোহাম্মদ আলী ও মস্তাক আহমদ সহ আমরা ৫ জন মিলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দেয়া পরামর্শে প্রথমবারের মতো ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাদেরকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ টাকা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। ভাল ফলনে আমরা আশাবাদী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন জানান, সূর্যমুখী ফুল থেকে পাখির খাবারের পাশাপাশি কোলেস্টেরল মুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পাম অয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্যঝুকি থেকে রক্ষা পাবে মানুষ। 

চলতি বছরে জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে কৃষকেরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার ও আন্ত-পরিচর্যার জন্য উপকরণ ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। 

যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সূর্যমূখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। ১ মণ বীজ থেকে ১৮কেজি তেল পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী চাষের ফলে অনেকের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদন ও ফুলের বীজ বিক্রি করে এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আমারসংবাদ/এআই