Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

সেই সিমার আত্মহত্যার কারণ নগ্ন ভিডিও: সাবেক ইউপি সদস্য পুত্র পলাতক !

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ (রংপুর)

মার্চ ৮, ২০২১, ০৭:৪৫ এএম


সেই সিমার আত্মহত্যার কারণ নগ্ন ভিডিও: সাবেক ইউপি সদস্য পুত্র পলাতক !

সিমা রানী (১৫)। লেখাপড়া করতো নবম শ্রেনিতে। গত ৫ জানুয়ারি সিমা নিজ বাড়িতে বিষপান করে। ওইদিন রাতেই সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ দাহ করা হয়। 

কিন্তু কি কারণে সিমা আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিলো তার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার দুই মাস পর এলাকায় ফাঁস হয় সিমার সঙ্গে এক যুবকের নগ্ন ভিডিও। শুরু হয় সিমার আত্মহত্যা নিয়ে তোলপাড়। কিন্তু বদরগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁর আত্মহত্যা এবং নগ্ন ভিডিও সম্পর্কে অজানা। 

সিমা রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি হিন্দুপাড়া গ্রামের মৃত মাখন চন্দ্রের মেয়ে। সে স্থানীয় কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়তো। তিন বোনের মধ্যে সিমা ছিল সবার ছোট। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। সিমা মায়ের সঙ্গে থাকতেন।

সিমার সঙ্গে যুবকের নগ্ন চার মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিও আমার সংবাদের হাতে এসেছে। 

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দালান ঘরের ঘাটের ওপর নগ্ন অবস্থায় মেয়েটিকে নিয়ে ওই যুবক ফুর্তিতে মেতে উঠেন। একটি ঘরের ভিতরে অতিগোপনে আরেকজন তা মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। 

ভিডিও’র এক জায়গায় মেয়েটি বলছে, মোর পেটের ভোক বেশি। 

জবাবে ওই যুবক বলেন, ‘কি খিদা বোলে, পেটের খিদা লতাপাতা দিয়ে মেটা যায়, যৌবনের খিদা কি দিয়া মিঠাবু।’ 

ওই ভিডিও’র সুত্র ধরে এলাকায় গেলে ভিডিওতে সীমাকে নিশ্চিত করেন এলাকাবাসী। 

ওই যুবকটি ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুছ আলীর ছেলে হাফিজুর রহমান বলেও নিশ্চিত করেন এলাকার লোকজন।

এলাকাবাসীর ধারণা, হাফিজুর রহমান মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করতে একজনকে দিয়ে ওই ভিটিওটি ধারণ করেন। পরে মেয়েটি জানতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন। 

তবে ভিডিওটি ফাঁসের পর থেকে মেয়ের অসহায় মা বাড়িতে নেই। 

এলাকার মানুষ জানান, ১০-১৫দিন থেকে বাড়িতে তালা ঝুলছে। অনেকেই বলছেন, মেয়ের মা বেটির বাড়িতে গেছেন। 

তবে বেটির বাড়ি কোথায়- জানতে চাইলে এলাকার মানুষ তা বলতে পারেননি। তবে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাফিজুরের পরিবার প্রভাবশালী। 

এ কারণে হাফিজুরের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা নেই মেয়েটির অসহায় মায়ের। 

তবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমানের বাড়ি থেকে মেয়েটির বাড়ির দুরত্ব দুই কিলোমিটার, নয়াপাড়া গ্রামে। হাফিজুর দুইটি বিয়ে করেছিলেন। তিনি দুই স্ত্রীকেই তালাক দিয়েছেন। রোববার তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। 

তার বাবা ইউনুছ বলেন, আমি ইউপি নির্বাচন করবো। প্রতিপক্ষ আমাকে এবং আমার পরিবারকে ঘায়েল করতে এমন কাজ করিয়েছেন। হাফিজুর কোথায়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার-পাঁচদিন ধরে সে বাড়িতে নেই। 

ওই ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনুছ বলেন, ‘ওই ভিডিও পুর্নগ্রাফি হতে পারে। ওই ভিডিও দেখিয়ে আমার প্রতিপক্ষ বর্তমান মেম্বার ফজলু ও রাসেল আমার ছেলের কাছ  থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। তার প্রমাণ এলাকার একজনের কাছে আছে।’

তবে ইউপি সদস্য ফজলুল হক বলেন, ‘টাকা দাবি দুরের কথা আমি ওই ভিডিও সম্পর্কে কিছুই জানি না। মেয়েটি বিষপানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ইউপি সদস্য হিসেবে ওইদিন রাতে সেখানে গিয়েছিলাম। এ ঘটনায় রংপুর কোতয়ালী থানায় ইউডি মামলা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে এলাকায় তার লাশ দাহ করা হয়।  তবে এখন শুনতে পারছি মেয়েটির সঙ্গে হাফিজুরের নগ্ন ভিডিও ফাঁসের বিষয়টি।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওই ভিডিও ধারণ করেছিলেন হিন্দুপাড়া গ্রামের কালিপদের ছেলে বিপুল চন্দ্র (২৬)। মেয়েটি আত্মহত্যার পর হাফিজুর রহমান ভিডিওটি নেয়ার জন্য বিপুলের কাছে ধর্ণা দেন। কিন্তু হাফিজুরকে ভিডিওটি দেননি বিপুল। বিষয়টি এলাকার তিন যুবক জানতে পেরে ১৫দিন আগে বিপুলকে আটক করে জোর করে তার কাছ থেকে ম্যামরীকার্ড খুলে নেন। এ ক্ষোভে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিপুলও বিষপান করেন। 

তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেন। রোববার (৭ মার্চ) বিপুলের খোঁজে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। 

তার মা বলেন, আমার ছেলের মাথার সমস্যা থাকায় সে বিষপান করেছিল। এখন সে বাড়িতে নেই। তবে সে কারও ভিডি ধারণ করেনি বলে তার মা দাবি করেন।

কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘মেয়েটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে অরুন নেছা স্কুলে। গত ৫ জানুয়ারি আমাদের স্কুলে ভর্তির জন্য ফরম সংগ্রহ করে। ওইদিনেই মেয়েটি বিষপানে আত্মহত্যা করার বিষয়টি জানতে পারি।’

মুঠোফোনে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি ওই ভিডিও সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না। আপনি (সাংবাদিক) যার কাছ থেকে ভিডিও পেয়েছেন তার কাছ থেকেই শুনেন’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রাকিব হাসান মো. ডলু শাহ্ বলেন, ‘ মেয়েটি আত্মহত্যার বিষয়টি শুনেছি। তবে কি কারণে সে আত্মহত্যা করেছে তা জানি না।’

রোববার (৭ মার্চ)  বিকেলে বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলী বলেন, ‘মেয়েটি আত্মহত্যার নথি এ থানায় নেই। যদি মেয়েটি রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান তাহলে কোতয়ালী থানায় ইউডি মামলা হয়েছে।’ 

মেয়েটির নগ্ন ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিডিও আমরা পাইনি। তবে আপনার (সাংবাদিক) কাছে ভিডিও থাকলে দেন আমি বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখবো।’

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এ থানায় যোগদান করেছি। মেয়েটির আত্মহত্যার বিষয়টি আমার জানা নেই।’  

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) নাজমুল হুসাইন বলেন, বিষপান করা মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করি। পরে শুনি মেয়েটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

আমারসংবাদ/এআই