Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঔষধ পাচার ও ১০ সাংবাদিককে আটকে রাখার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন 

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি

মার্চ ৮, ২০২১, ০১:৫৫ পিএম


ঔষধ পাচার ও ১০ সাংবাদিককে আটকে রাখার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন 

বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঔষধ পাচার ও অবৈধ ভাবে পোড়ানোর ভিডিও ধারণ ছবি তোলায় ১০জন সাংবাদিককে দুইঘন্টা আটকে রাখার ঘটনায় ইউএনওর নির্দেশে রোববার (৭ মার্চ) রাতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

গৌরনদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাছুম বিল্লাহকে আহবায়ক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জলিল, গৌরনদী মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামানকে সদস্য করে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমাদিতে বলা হয়েছে। 

এ ঘটনা থেকে নিজেদেরকে রক্ষার অপকৌশল হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পলাতক ষ্টোর কিপার সাইদুল ইসলামের নামে রোববার বিকেলে গৌরনদী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডাইরী (জিডি) করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ। সেই সাথে ঘটনাটিকে ধামাচাঁপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলও জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই মহলটির সহযোগী হিসেবে দু’এক জন সাংবাদিকও নেপথ্যে কাজ করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গৌরনদীর স্থানীয় সাংবাদিকরা শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সোর্সের মাধ্যমে খবর পায় যে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ পাচার হচ্ছে এবং কিছু ঔষধ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এরপর সাংবাদিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়াসহ স্থানীয় ১০জন সংবাদকর্মী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে তারা দেখতে পান কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার ও ষ্টোর কিপার সাইদুর রহমান, ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ তাদের বহিরাগত আরো ৪/৫ জন সহযোগী মিলে কয়েকটি বস্তা ভর্তি সরকারি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছেন এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়াটারের পাশে একটি নির্জন স্থানে ফেলে বেশ কিছু ঔষধ তারা পুড়িয়ে ফেলছেন। 

সংবাদকর্মীরা তখন এ ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলতে গেলে ডাক্তার-কর্মচারীরা সেখানে বেশ কিছু সরকারি ঔষধ ফেলে পালিয়ে যায়। ছবি তোলা ও ভিডিও ধারনের পর সংবাদকর্মীরা ওই এলাকা ত্যাগ করতে গিয়ে দেখেন ডাক্তার কোয়াটারের দুটি গেট তালাবদ্ধ করে দিয়ে সিকিউরিটি লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা তখন বুঝতে পারেন যে, তাদেরকে আটকে ফেলা হয়েছে। ফলে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে ঘটনাটি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানান। একই সাথে ফেইসবুক লাইভে এসে তারা তাদেরকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর কাছে আবেদন জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ এ সময় তার কোয়াটারের বাসার ভেতরেই ছিলেন। 

আটক অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সাংবাদিকরা তখন সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ’র মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেন। তিনি সংবাদকর্মীদের ফোন রিসিভ করেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম (প্রিন্স) গৌরনদী মডেল থানার এসআই কামাল হোসেনকে সাথে নিয়ে  ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডাক্তার কোয়াটারের গেট খোলার নির্দেশ দেন। তাকে দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষা করিয়ে রেখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ গেটের তালা খুলে দেন। ফলে ঘটনার প্রায় দুইঘন্টা পর আটকে রাখা মুক্ত হন সংবাদকর্মীরা।
এরপর ইউএনও’র নির্দেশে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়ার্টার ও আসপাশের এলাকা তল্লাশী চালিয়ে কোয়াটারের পাশের ঝোপ ও ঝাড়ের ভেতর থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়া বস্তাও কার্টন ভর্তি বিপুল পরিমাণ সরকারি ঔষধ ও ইনজেকশন এবং চিকিৎসা সামগ্রী জব্দ করেন। যেগুলোর গায়ে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ লেখা রয়েছে। 

এ ঘটনা জানা জানি হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আসপাশের এলাকার শতাধীক সাধারণ মানুষসহ স্থানীয় অন্যান্য সংবাদকর্মীরা ওই রাতে সেখানে জড়ো হয়ে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবিতে ইউএনও’র সামনে মিছিলসহকারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাত ১টার দিকে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে উত্তেজিত এলাকাবাসী ও সাংবাদিকরা শান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যায়। 

আটকের শিকার সাংবাদিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া, কাজী আল আমীন দাবি করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার নির্দেশে ডাক্তার কোয়াটারের দুটি গেটে তালা দিয়ে আমাদেরকে আটকে রাখা হয়।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমারসংবাদ/কেএস