Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পানির জন্য ১০ মিনিট স্তব্ধ তিস্তার ২৩০ কিলোমিটার

শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট

মার্চ ২৪, ২০২১, ১১:৫৫ এএম


পানির জন্য ১০ মিনিট স্তব্ধ তিস্তার ২৩০ কিলোমিটার

তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানিবণ্টন চুক্তিসহ ছয় দফা দাবি আদায়ে ১০ মিনিট স্তব্ধ ছিল তিস্তার ২৩০ কিলোমিটার এলাকা। নদীর দুই পাড়ের প্রায় দুই শতাধিক হাট-বাজারে দাঁড়িয়ে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য স্তব্ধ থেকে প্রতিবাদ জানায় হাজার হাজার মানুষ।

বুধবার (২৪ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১০ পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়। তিস্তা নদীর দুই তীরের প্রায় দুই শতাধিক হাট-বাজার ও বন্দর ১০ মিনিট স্তব্ধ হয়ে পড়ে। ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ এই স্তব্ধ কর্মসূচির আয়োজন করে।

বাংলাদেশে তিস্তা নদীর প্রবেশ মুখ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই জিরো পয়েন্ট থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ঘাট পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০ মিনিটের স্তব্ধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মানুষের হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। তিস্তা বাঁচানোর আকুতি নিয়ে বুকে নানা ধরনের স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এতে তিস্তা বাচাঁও, নদী বাচাঁও সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। স্তব্ধ হয়ে থাকার ১০ মিনিট পর ছয় দফা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নেতারা।

বক্তারা বলেন, সরকার তিস্তা রক্ষায় যে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তিস্তা রক্ষা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা চুক্তি সই না হওয়ায় উত্তরের দুই কোটি মানুষ খরা ও বন্যায় নিষ্পেষিত। উত্তরাঞ্চলের মানুষদের বাঁচাতে তিস্তা চুক্তি সই এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা, ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, কৃষক সমবায় ও কৃষিভিত্তক শিল্প কলকারখানা, তিস্তার শাখা প্রশাখা ও উপ-শাখার আগের অবস্থায় সংযোগ স্থাপন এবং দখল ও দূষণমুক্ত করে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কৃষিনির্ভর এই জনপদ মরুভূমিতে পরিণত হবে। হুমকির মুখে পড়বে এখানকার কৃষি, পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবনরেখা।

তারা আরও বলেন, তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা তীরবর্তী পাঁচটি জেলার আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। তিস্তা তীরের মানুষের দুঃখের দিন শেষ হবে। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা। কিন্তু একটি চক্র এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তাই তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নদীর দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচির পর এবার স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

এ সময় তিস্তা পারের হাট বাজার বন্দরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রেখে দোকানদার সহ ভুক্তভোগী লাখো মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন। কিছু সময়ের জন্য যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় রংপুর-লালমনিরহাট আঞ্চলিক সড়কসহ এ অঞ্চলের প্রায় সড়কের যোগাযোগ। 

স্তব্ধ কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষ দাবি জানিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তির সুনির্দিষ্ট সই করে তিস্তার পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা না হলে এই অঞ্চলের ২ কোটি মানুষের জীবন এবং জীবিকা যে হুমকির মুখে পড়েছে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিবে। এছাড়াও সরকার গৃহীত তিস্তার সার্বিক উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা সুবর্ণ জয়ন্তী মাসেই শুরু করার আহ্বান জানান তারা।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, তিস্তা বাচলে আমরা বাঁচবো। তিস্তার বুক থেকে ভারত এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করায় আমাদের বাচার অধিকার হরণ করেছে। আমরা এখন বাচঁতে চাই।  

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ এর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ বলেন, উত্তরের জীবন রেখা আজ মড়তে বসেছে, এই জীবন রেখা তিস্তাকে বাচানোর জন্য আমরা আজ ১০ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে তিস্তার মহাপরিকল্পনা নদীর স্বার্থ বজায় রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিও আমরা চাই। এই দুই দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন এর দাবিতেই আজ এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আমরা চাই তার এই ঐতিহাসিক সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হোক। এই মাহেন্দ্রক্ষণে উদ্বোধন করতে হবে তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার বিষয়ক মহাপরিকল্পনার কাজ। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি অভিন্ন পানি চুক্তি ও অবিলম্বে নদী খনন করতে হবে। অন্যথায় তিস্তাকে রক্ষা করা যাবে না।

আমারসংবাদ/কেএস