Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

তাদের কষ্টের জীবন চলছেই

তপু সরকার হারুন, শেরপুর প্রতিনিধি

মার্চ ২৭, ২০২১, ১২:১০ পিএম


তাদের কষ্টের জীবন চলছেই

আমি কতবাল আমার আইদি কাধ নিয়ে আজাদ চেয়ারম্যানের গেছি, একতি সরকারি সাহায্য পায়নি। একটি বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা কোনটি পায়নি। কষ্টের জীবন চলছেই।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব সমসচুড়া গ্রামের মৃত আদিবাসী নিকলাস সাংমার স্ত্রী লুচি সাংমা ৮৩ তার গাড়ো আঞ্চলিক ভাষায় এই কথা বলেন।

শেরপুরে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবর্দী উপজেলার সীমান্তর্বতী বিস্তীর্ণ এলাকায় বাস করে পাহাড়ি আদিবাসী গারো সম্প্রদায়। 

মুসলমান, হিন্দু, কোচ, ডালু, বানাই, হদি ইত্যাদি সম্প্রদায়রে পাশাপাশি গারো সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষুধা আর দারিদ্রের সাথে লড়াই করে আজও বেঁচে আছে।

এদের অধিকাংশ পরিবারই বন থেকে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ আর অন্যরে বাড়িতে দিন মজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করে। এটা করতে গিয়ে অনেকেই আগাম শ্রম বিক্রি করে সংসার চালায়।

শেরপুর জেলার নালতিাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবর্দী সীমান্তের কিছু পরিবার দারিদ্রের সাথে বাপ-দাদার ভিটায় খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। 

কেউ কেউ বন থেকে বাঁশের পাতা সংগ্রহ করে ঘর নির্মাণ করে আদি পুরুষদের আদি নিবাসে বসবাস করছে। 

এখনো কিছু কিছু পরিবার বন থেকে লাকড়ী বা জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে কিংবা পরের বাড়িতে দিন মজুরী করে সংসার চালাচ্ছনে।

কেউবা ক্ষুধা তাড়াবার জন্য বন থেকে মাটি খুড়ে গাছ আলু সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে খাচ্ছেন। 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব সমসচুড়া গ্রামের মৃত নিকলাস সাংমার স্ত্রী লুচি সাংমা ৮৩ বলেন, আমরা খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করছি। 

গত ২৫ বছর আগে আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ৪ সন্তান রেখে যান। এখন হিমেন্দ্র সাংমা ৪০, বেনাদেক সাংমা ৩৮, জসিংতা সাংমা ও প্রিতিনা সাংমা। সহায় সম্পদ বলতে এক খন্ডজমিতে এই খুপড়ি ঘর। 

সন্তানেরা বিভিন্ন মজুরের কাজ করলেও তাদেরই দিন চলে না। বৃদ্ধা লুচি সাংমার ৮৩ বছর বয়স হলেও কথা বলেন খুব স্পষ্ট ভাষায়। বলেন, সে খুপরি ঘরে নায়নাতি সহ মিলে ১০ থাকেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা এতো কিছু দিলেও আমি এই আইডি কার্ডটি নিয়ে কতবার আজাদ চেয়ারম্যানের কাছে গেছি এখনো কোন সরকারী সাহায্য পাই না। একটি বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা কোনটি পায়নি।

এখানকার আদিবাসীদরে জীবন দারদ্র্যি, ভূমি সমস্যা, বন মামলা, এবং বন্য হাতরি তান্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামাজকি বনায়নে অনেক দরিদ্র পরিবারকে অংশীদার বানানো হয়নি।

আদিবাসী নতোরা বলনে, সরকার গারো আদিবাসীদরে দিকে ঠিকমতো নজর দেয় না। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি আদিবাসীরা বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও অন্যান্য সরকারী সাহায্য সহযোগতিা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কমই পায়। 

আদিবাসীদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়লে ফয়োর এসোসয়িসেন (টিডাব্লিইএ) সুত্রে জানা গেছে, ৩২৭.৬১ র্বগ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্টি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি গ্রামের ৫শতাধিক পরিবারে প্রায় ২০ হাজার আদিবাসী সদস্য রয়েছে। এরা আর্থিকভাবে দরিদ্র বিধায় প্রকৃতির বিভিন্ন প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে বসবাস করে আসছে।

আদিবাসীদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। মা-ই পরিবারের কর্তা ও সম্পত্তির অধিকারী এবং এক্ষেত্রে পিতা পরিবারের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে। পরিবারের সন্তানসন্ততিরা মায়ের পদবি ধারণ করে। গারোদের প্রথাগত আইন অনুযায়ী পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী মেয়েরা।

শুধুমাত্র নির্বাচিত মেয়েই সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে। বর্তমানে মা-বাবা তাদের জীবিতাবস্থাতেই পুত্রসন্তানের নামে জমি লিখে দিচ্ছেন।

১৩টি দল ছাড়াও সমগ্র গারো সমাজ ৫টি গোত্রে বিভক্ত। গোত্রগুলো হচ্ছে: সাংমা, মারাক, মোমিন, শিরা ও আরেং। গারো সমাজে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে অসবর্ণ প্রথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একই উপগোত্রের মধ্যে বিবাহ গারোসমাজে নিষিদ্ধ।

আমারসংবাদ/এআই