Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রাথমিকে উচ্চতর স্কেল ইস্যুতে ঘুষের তহবিল গঠন

মাসুদুর রহমান, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)

মার্চ ২৮, ২০২১, ০২:০০ পিএম


প্রাথমিকে উচ্চতর স্কেল ইস্যুতে ঘুষের তহবিল গঠন

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কৌশলে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না বিধায় সকলের সম্মতিক্রমেই চাঁদা আদায় করে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মুহাম্মদ আব্দুর রহিম। তিনি জাবরকোল জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কতিপয় ব্যক্তিদের সাথে আব্দুর রহিমের সখ্যতা থাকায় দাবিকৃত চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেন সাধারণ শিক্ষকরা। 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চাকরিতে ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্য হয় উপজেলার ৯৫ জন সহকারী শিক্ষক। সস্প্রতি তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। ৯৫ জনের মধ্যে ২০০৮ সালে যোগদান করেন ২৪ জন, ২০০৯ সালে ৩১ জন এবং ২০১০ সালে যোগদান করেন ৪০ জন। এদের সবার কাগজপত্র ৩টি অগ্রায়ণপত্রের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে, বর্তমানে সেখানেই রয়েছে ফাইল।

সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কতিপয় ব্যক্তিদের সাথে অভিযুক্ত আব্দুর রহিমের সখ্যতা রয়েছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগী সাধারণ শিক্ষক। তাই তারা প্রকাশ্যে অভিযোগ দিতে ভয় পান। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, হাজার টাকা কেউ ইচ্ছে করে দেয় না। গত মাসে আমাদের সবাইকে ডেকে উচ্চতর স্কেলের কথা বলা হয়। সেখানে আব্দুর রহিম নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার কাছে আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ১ হাজার টাকা দিতে বলা হয়। আব্দুর রহিমের সাথে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর অনেকেরই সখ্যতা রয়েছে, প্রায় সময়ই তাদের সাথে দেখা যায় বলেই তার প্রতি সবার আস্থা দীর্ঘদিনের। চাঁদার বিষয়ে কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছিলো, কাজ হয়নি। বেশী কথা বললে আপনার ফাইল নিবোনা পারলে নিজেই করেন গিয়ে, এমন কথাও বলা হয়েছিলো সেদিন। ঝামেলা এড়াতে হাজার টাকা দিয়েছি। তবে ঘুষ ও আনুষাঙ্গিক খরচ শেষে অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেয়ার কথা রয়েছে আব্দুর রহিমের। অভিযুক্ত বলেন, এমনটা চললে চাঁদার রীতি প্রচলন হয়ে যাবে। তাই তারা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও দেশ সেরা প্রধান শিক্ষক মো: শহিদুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বালিয়াকান্দি শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বপালন করছেন। তার মতে শিক্ষকদের কাছে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এটা শিক্ষক হিসেবে আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন করার মতোই ঘটনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি কর্তৃপক্ষের নিকট।

অভিযুক্ত জাবরকোল জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম জনপ্রতি হাজার টাকা নির্ধারণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না, তাই সবার সম্মতিতেই জন প্রতি ১ হাজার টাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের টাকা পাওয়া গেছে। 

কোন কোন দপ্তর আপনাদের কাজগুলো সম্পন্ন করবেন বা কোন দপ্তরকে কত টাকা দিতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহিম বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং হিসাবরক্ষণ অফিস, তবে এখনো কাউকে কোন টাকা দিইনি। শিক্ষকরা অফিসে আবেদন করবেন এবং অফিস সেটা নিয়ম অনুযায়ী জেলায় প্রেরণ করবেন, তাহলে আপনি কেন শিক্ষকদের নিকট থেকে চাঁদা নিলেন। 

এমন প্রশ্নও ছিলো আব্দুর রহিমের নিকট। তিনি বলেন, অফিস কিছুই করেনি, যে কাজ অফিসের সে কাজও আমি করেছি, শিক্ষকের প্রত্যায়ন পত্র, অগ্রায়ণপত্রও আমাকে করতে হয়েছে, এসব কাজের জন্য টাকা তো লাগবেই। শিক্ষা অফিসার শুধু স্বাক্ষরই করেছেন।

এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: আশরাফুল হক বলেন, সম্প্রতি বহু সংখ্যাক শিক্ষকের চাকরি ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেলের কাগজপত্র জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। কোন ধরনের আর্থিক সুবিধা নেয়ার প্রশ্নই আসে না। অফিস সহকারি সকল আবেদন যাচাই-বাছাই করে ৩টি অগ্রায়ণপত্র তৈরি করেছেন, আমি সেখানে স্বাক্ষর করেছি। এখানে আব্দুর রহিম কেন চাঁদা তুলবে? কাজটা তো আমার, আমার অফিসের! উচ্চতর স্কেল শিক্ষকদের প্রাপ্য। বালিয়াকান্দি উপজেলা এবং রাজবাড়ী জেলায় উচ্চতর স্কেলের কাজ সম্পন্ন করতে ঘুষ নিবে এমন কেউ নেই। অফিস কর্তৃক প্রত্যায়ন, অগ্রায়ণপত্রও শিক্ষকদের বাইরে থেকে করতে হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্ব স্ব শিক্ষক তাদের আবেদন ও কাগজপত্র সম্পন্ন করেছেন। চাঁদা আদায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, আমার অফিসে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। যদি কোন শিক্ষক এমন কর্মকান্ডে জড়িত হন তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

আমারসংবাদ/কেএস