Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কালীগঞ্জে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প

মোঃ সাজু মিয়া, কালীগঞ্জ(লালমনিরহাট)

এপ্রিল ৪, ২০২১, ১০:২০ এএম


কালীগঞ্জে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প

কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি বিজরিত জন্মভূমি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মহিষামুড়ী এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস বাঁশ ও বেত শিল্প থেকে। 

কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক হারে ব্যবহার বৃদ্ধিতে কদর নেই এসব হস্তশিল্পের। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও এই শিল্পকে আকড়ে ধরে বেচেঁ আছেন পরিবারগুলো।

শনিবার(৩ এপ্রিল) কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধারা তৈরীতে ব্যস্ত ফরিদা বেগম সহ এলাকার বেশ কিছু পরিবারের লোকজন। পুরুষেরা বাঁশ কেটে যোগান দিচ্ছে আর বাড়ীর গৃহিনীরা তৈরী করছেন ডালি, কুলা, চালন, চাটাই, খাঁচা ও ধারা।

জানা যায়, গ্রামীণ জনপদের এক সময়কার জনপ্রিয় ছিলো এই বাঁশ ও বেত শিল্প। গ্রামগঞ্জে, শহরে-বন্দরে ব্যাপক চাহিদা ছিল পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যের। বিশেষ করে নতুন বছরের অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি, হালখাতা, কোরবানির ঈদে বেশ ভালো বিক্রি হতো বাঁশের তৈরি এসব পণ্য। বর্তমানে হাতে তৈরি বাঁশ ও বেত শিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এলাকায় সাংবাদিকের উপস্থিতি জেনে ছুটে আসেন পাড়ার অনেকেই। কথা হয় ছামাদ আলী (৩৪), আজহার আলী(৩৮) ও ছকের আলীর (৬০) সাথে। তারা জানান, প্রতিটা বাঁশ কিনতে(ক্রয়) করতে হয় ১০০ টাকা দিয়ে। সেই বাঁশ থেকে সাড়ে তিন হাত বাই আড়াই হাত মুল্যের ৩ টি ধারা তৈরি হয় এবং তা হাট বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। 

তাছাড়া বাসা বাড়ির ছাদ দিতে ১০০ থেকে ৫০০ হাত লম্বা ধারা তৈরীর অর্ডারও আসে তাদের কাছে। বাঁশের কেটে ফেলা অগ্রভাগের অংশ দিয়ে তৈরী হয় ঝাড়ু। সারা বছরই চলে ধারা তৈরী ও বিক্রির কাজ। গ্রাম্য হাট বাজার ও স্থানীয় আজিজ ও রাজ্জাক পাইকারের কাছে বিক্রি হয় এসব। 

তবে বেশি বিক্রি এবং দাম ভালো হয় ধান ও ভুট্টা জাতীয় ফসল উঠার সময়টায়। এতে বেশি একটা লাভ না হলেও বাপ-দাদার পেশাকে আকড়ে ধরে আছি অন্যদিকে জীবন বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে এই কাজ করি।পরিবারের অনেকেই বলেন,সব মিলে আমরা ভালো নেই। 

জানা যায়, কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ী এলাকাটির একটি অংশ পরিচিতি পেয়েছে ধারা পল্লী নামে। তবে স্থানীয়রা সেটিকে চেনেন ধারা বা ধারি পাড়া নামে। এখানে বাঁশের কাজ করেন ৩৫ টি পরিবার। 

জীবিকা নির্বাহে মুল পেশা হিসেবে পাড়াটিতে এসব কাজে নিয়োজিত আছেন নারী পুরুষ মিলে প্রায় ১২০ জন সদস্য। তবে বাঁশ থেকে ধারা তৈরীর কাজটি বেশি ভাগ সময় পরিবারের নারী সদস্যরাই করে থাকেন। 

বাঁশ ক্রয় থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে যোগান দিয়ে থাকেন বাড়ীর কর্তারা। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এই কাজে সহায়তা করেন। এই ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার এবং ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ।

এসব কাজে অর্থ যোগানে সরকারী বে-সরকারী ভাবে কোন সহযোগীতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকার তো হামার দিকে দ্যাখে না আর ব্যাংগুলো তো ঋন দেয় না। অনেক সময় পাইকারের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে বাঁশ কিনি। এতে করে কম মুল্যে তা বিক্রি করতে হয়। 

তারা আরো বলেন, বসে বসে কাজ করতে করতে শরীরে ও কোমরে ব্যথা বাসা বাঁধছে। কিন্তু সংসার,সন্তান ও জীবিকার তাগিদে চালিয়ে যেতে হয় ধারা তৈরীর কাজগুলো। ।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কালীগঞ্জের সমাজসেবা অফিসার সুকান্ত সরকার বলেন, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে আসন্ন বরাদ্দে ওই পল্লীর লোকজনকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আমারসংবাদ/এআই