এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৩:৫৫ পিএম
সন্তান জন্মের সম্ভাব্য তারিখ ৮ এপ্রিল ছিল। তাই দিনাজপুরের সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর জন্য রোববার স্বামী মনসুর আলীর সঙ্গে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ এ ওঠেন মুক্তি পারভীন।
তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভুমরাদহ হাজী পাড়া গ্রামে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ স্টেশন থেকে ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রসব ব্যথা শুরু হয় মুক্তি পারভীনের। এগিয়ে আসেন ট্রেনের অন্যান্য নারী যাত্রীরা।
তাদের সহায়তায় মুক্তি পারভীন নিরাপদে একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। ততক্ষণে ট্রেন এসে দিনাজপুর ষ্টেশনে পৌছালেও ফুল না পড়ার কারণে মা ও নবজাতককে ট্রেন থেকে নামানো যায়নি।
এ সময় স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট এবিএম জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্ত দেন, মুক্তি পারভীন ও নবজাতককে নিরাপদে হাসপাতালে না পাঠানো পর্যন্ত ট্রেন দিনাজপুর ষ্টেশন ছেড়ে যাবে না।
পরে জিআরপি পুলিশ ও নারী ষ্টেশন মাষ্টার নার্গিস বেগম এবং একজন স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাইয়ের সহযোগিতায় মুক্তি পারভীন ও নবজাতককে নিরাপদে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বর্তমানে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন মুক্তি। এ ঘটনায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের ১৩ মিনিট পর সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের স্থলে ১০টা ২৭ মিনিটে দিনাজপুর ষ্টেশন ছাড়ে।
এদিকে চলন্ত ট্রেনে জন্ম হওয়ায় বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ির মধ্যে চলাচলকারী ‘মিতালী’ ট্রেনের নামে মুক্তি পারভীনের কন্যাসন্তানটির নাম রাখা হয়েছে মিতালী।
দিনাজপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের সুপার এবিএম জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে মুক্তি পারভীন ও নবজাতককে নিরাপদে ট্রেন থেকে নামিয়ে বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে পৌঁছে দিয়েছি।
‘বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহী সুফি নুর মোহাম্মদকে জানানো হলে তিনি ‘মিতালী’ ট্রেনের নামে নবজাতক কন্যাসন্তানটির নাম মিতালী রাখতে বলেন। তার নির্দেশে নবজাতকের নাম মিতালী রাখা হয়েছে। নবজাতকের মা-বাবা এই নাম রাখায় খুবই খুশি।’
মুক্তি পারভীনের স্বামী মনসুর আলী জানান, এটা তাদের দ্বিতীয় সন্তান। তাদের বড় মেয়ের বয়স দুই বছর।
এদিকে জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. পারভেজ সোহেল রানা জানান, মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছে। তাদেরকে একগুচ্ছ ফুল, ফল, বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নতুন জামাকাপড় উপহার দেয়া হয়েছে।
সোমবার তাদেরকে হাসাপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে।
আমারসংবাদ/এএসএম