Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

করোনা ভাইরাস সচেতনাতায় মাগুরা পুলিশ সুপার 

মিরাজ আহম্মেদ, মাগুরা

এপ্রিল ৬, ২০২১, ১১:৫৫ এএম


করোনা ভাইরাস সচেতনাতায় মাগুরা পুলিশ সুপার 

করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়ায় মাগুরা জেলাবাসীর জন্য সচেতনতামূলক প্রচার প্রসার বৃদ্ধি করেছেন মাগুরা জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মাগুরা। 

শরীর যখন ভাইরাসের সাথে লড়াই করছে তখন যেসব উপসর্গ দেখা দেবে সেসব কমিয়ে আনতে চিকিৎসা নিতে হয়। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

পৃথিবী জুড়ে এখন এক নতুন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এ নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগবে এটাই স্বাভাবিক। নিজের মনে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে মনের অযথা ভয় অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় ধাপে করনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে মৃত এবং আক্রান্ত সংখ্যা। 

করোনাভাইরাস কী? করোনাভাইরাস নোভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। অনেক প্রজাতির করোনাভাইরাসের মধ্যে ৭টি প্রজাতি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। কোভিড-১৯ ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। সার্স বা মার্স ভাইরাসের মতোই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলো কী?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণগুলো হচ্ছে, হাঁচি, কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা। পরবর্তীতে নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্ট।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা জানতে কতদিন সময় লাগে? আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে। রোগাক্রান্ত কেউ কোনো জায়গা স্পর্শ করার পর যেমন- পানির কল, দরজা, চেয়ার-টেবিল, বেসিন, দরজার হাতল, কমোডের সিট, সিট কভার, সুইচ ইত্যাদি সুস্থ কেউ স্পর্শ করলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২-১৪ দিন সময় লাগতে পারে।

কাদের জন্য এই রোগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে? যেকোনো বয়সি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং কিছুদিনের মধ্যে সুস্থও হয়ে উঠতে পারে। আক্রান্তদের মৃত্যুহার কম। তবে বয়স্ক এবং অন্য কোনো রোগে আগে থেকেই (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা ইত্যাদি) ভুগছিলেন এমন রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

করোনা ভাইরাস, আইন কি বলে? আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার মাঝেই সকলের নিশ্চিত সুস্থতা অন্তর্নিহিত।

সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে ১৮৬০ সনে প্রণীত দণ্ডবিধির ২৬৯, ২৭০, ও ২৭১, ধারার বিধান থাকার পাশাপাশি আরেকটি স্বতন্ত্র আইন আছে। আইনটি হচ্ছে "সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮" (২০১৮ সনের ৬১ নং আইন )। এটি একটি বিশেষ আইন। 

এই আইনের ৩ ধারা মোতাবেক "আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে"। ধারা ৪ এ ২৩ টি রোগকে সংক্রামক রোগ হিসেবে দেখানো হলেও ধারা ৪(ভ) এর বিধান অনুয়ায়ী সরকারি গ্যাজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত কোনো নবোদ্ভূত বা পুনরুদ্ভূত (Emerging or Reemerging) রোগসমূহকে সংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।

এই আইনের ১৪ ধারা অনুয়ায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন করার বিধানের বর্ণনা দেয়া আছে। ১৪ ধারাটি নিম্নরূপ - 

যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হইলে তাহার মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত হইতে পারেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তিকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, সাময়িকভাবে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর বা জনবিচ্ছিন্ন করা যাইবে।

২৪ ধারায় রোগের বিস্তার ঘটানো এবং তথ্য গোপন করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ২৪(২) ধারা অনুযায়ী যার শাস্তি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ড, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ড। 

অর্থ্যাৎ আপনি নিজে যদি সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং জ্ঞাতসারে যে তথ্য গোপন করে অন্যের সাথে মেলামেশা করেন এবং এভাবে রোগের বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন তবে আপনি ২৪(২) অনুয়ায়ী সাজাযোগ্য অপরাধ করলেন।

কেউ যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাজে বাধা প্রদান করেন বা নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন তা হলে সে ধারা ২৫(২) অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। 

যদি কোন ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তা হলে ২৬(২) ধারা অনুযায়ী তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে এই আইনের ২৮ ধারা অনুয়ায়ী এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (Non-cognizable), জামিনযোগ্য (Bailable) এবং আপোষযোগ্য (Compoundable)।

এখন যারা হোম কোয়ারান্টাইনে বা আইসোলেসনে থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বা হসপিটাল থেকে পালাচ্ছেন, বাড়ি বাড়ি যেয়ে মোলাকাত করছেন তারা এই আইন লঙ্ঘন করার ফলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন। মনে রাখা জরুরি - আপনি যদি হোম কোয়ারান্টাইন আদেশ লঙ্ঘন করেন তবে আপনার কোয়ারান্টাইন টা জেলখানায় হতে পারে।

মাগুরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, আসুন, সুস্থ ও মানব কল্যাণবান্ধব দেশ গড়ায় সহযোগিতা করি।

আমারসংবাদ/কেএস