Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রৌমারীতে লম্পটের ফাঁদে গৃহবধূ সর্বস্ব হাড়িয়ে গ্রামছাড়া

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

এপ্রিল ৮, ২০২১, ০৮:৫৫ এএম


রৌমারীতে লম্পটের ফাঁদে গৃহবধূ সর্বস্ব হাড়িয়ে গ্রামছাড়া

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ৩ নং বন্দবেড় ইউনিয়নের বাইটকামারী গ্রামের এক কাপড় ব্যবসায়ীর লালসার শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। 

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্বামিকে তালাক, অনৈতিক কর্মকান্ড, অন্তরঙ্গ মূহুর্তের আপত্তিকর মোবাইলে ছবি ধারণ, মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে অতঃপর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে বাবার গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে এক গৃহবধূকে। 

অসহায় হয়ে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সেই গৃহবধূ। গত ২০ দিন যাবৎ পাশের গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই গৃহবধূ। এনিয়ে ওই এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল)  সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, বাইটকামারী গ্রামের আবু তাহেরের লম্পট ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী বাছেদ মিয়া (৩২) একই এলাকার আবু হানিফের বিবাহিত মেয়ের সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। 

তাদের এই প্রেমের সম্পর্কের কথা বাইটকামারী বাজারের প্রায় সব দোকানিই জানেন। 

তাদের অনেকেই বলেন, বাছেদ ওই মেয়েটার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি করা মোটেই  ঠিক করেনি। 

অনেকে আরও জানান, এর আগেও বাছেদের নারী কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছে সামাজিক ভাবে বিচার শালিসও হয়েছে।

উপজেলার প্রত্যন্ত বাগুয়ার চরের এক বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা নির্যাতিতা ওই গৃহবধূর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার প্রথম বিয়ে হয় বাইটকামারী গ্রামের মিজান মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়ার সাথে। 

সেখানে সংসার চলাকালিন সময়ে বাইটকামারী বাজারে জামা-কাপড় কেনাকাটা করা হয় বাছেদের দোকানে। সেই সুবাদে হঠাৎ একদিন বিকালে সুযোগ বুঝে আমার শশুর বাড়িতে গিয়ে আমাকে আচমকা জাপটে ধরে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে বাছেদ। 

এসময় আমার ভাশুর বাড়িতে আসলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় সে। তাকে দ্রুত সটকে পড়তে দেখে আমাকে সন্দেহ করেন তিনি। এই সূত্রধরে আমাকে তালাক দেয় আমার স্বামি। 

এর কিছু দিন পর আমার দ্বিতীয় বিয়ে হয় রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়ার গ্রামের সোনাউল্লাহ মিয়ার ছেলে আজগর আলীর সাথে।

আজগর আলী ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করার কারণে বেশী সময় আমাকে বাবার বাড়িতে থাকতে হতো। এমতাবস্থায় বাছেদ আবার বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।

আমি তার অসৎ উদ্দেশ বুঝতে না পেয়ে তার প্রেমের ফাঁদে পা দেই। তার পরার্মশ মোতাবেক প্রথমে আমি আমার স্বামিকে তালাক দেই। পরে সে আমাকে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোবাইলে আপত্তিকর ছবি ওঠায়।

পরে আমি বিয়ে করার চাপ দিলে আমার কাছ থেকে দামি মোবাইল সেটসহ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি বিভিন্ন সময়ে আমার গহনা বিক্রি করে ৩টি এড্রুয়েট মোবাইল সেট ও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বাছেদকে দেই। 

এরপরেও বাছেদ আমাকে বিয়ে না করে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে বিয়ের চাপ দিলে তোমার সাথে তুলা সব আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিব এবং পরে তাই করে।

গত ১৫/২০ দিন হল আপত্তিকর ছবি গুলো ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনায় গ্রামের মানুষ বাদি হয়ে আমার দাদাকে এক ঘরে করার হুমকি দেয়। পরে আমার দাদা আমার থাকার ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে গ্রাম ছাড়া করে দেয়। এখন আমরা মা মেয়ে যেখানেই আশ্রয় নেই সেখাই বাছেদ লোক পাঠিয়ে বাড়ি ওয়ালাদের হুমকি দেয়। 

থানায় যান না কেন ? এক প্রশ্নের জবাবে ওই গৃহবধূ বলেন, থানায় গেলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে ওই বাছেদ। এখন আমি আর আমার মা কয় দিন এভাবে মানুষের বাড়ি বাড়ি মানবেতর জীবন কাটাব। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আমি এর বিচার চাই।

এই বিষয়ে কথা হয় ওই নির্যাতিতার মা পিঞ্জিরা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, আমার মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বাছেদ। সে প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামবাসি বাছেদের বিচার না করে ওর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে মেয়েকে সহ আমাকে গ্রাম ছাড়া করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ দিতে সাহস পাচ্ছিনা। থানায় অভিযোগ দিলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বাছেদ। ভয়ে আমরা রৌমারী থানায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছিনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গরিবের বিচার কেউ করেনা।

নির্যাতিতার দাদা হজরত আলী  বলেন, তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়নি। নিজে থেকে তারা মা মেয়ে চলে গেছে। 

ঘর ভেঙ্গে দিয়েছেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের অপকর্মের কারণে এবাড়িতে রাখব না। পাশের জমিতে বাড়ি করে দিব।

এই ব্যপারে কথা হয় ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা আলহাজ আব্দুল কাদেরের সাথে। 

তিনি বলেন, এই বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তবে শুনেছি উভয়পক্ষ আপোষ মিমাংসা করে নিয়েছে।

রৌমারী থানার (ওসি)  মোন্তছের বিল্লাহ বলেন, এরকম কোন তথ্য বা অভিযোগ এখন পাইনি। যদি অভিযোগ আসে তাহালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমারসংবাদ/এআই