মো: জসিম, নারায়নগঞ্জ
এপ্রিল ১২, ২০২১, ১০:০৫ এএম
নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার, কাঞ্চন, ভুলতা, গোলাকান্দাইল গ্রামের মানুষের এক সময়ে উপার্জনের বাহন ছিল তাঁত শিল্প। কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে। এক সময়ে এসব এলাকার মানুষের ঘুম ভাংতো তাঁতের খটখট শব্দে। ব্রিটিশ আমল থেকেই রুপগঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে ছিল তাঁত কারখানা। এ সকল তাঁতের, লুঙ্গি ও মোটা শাড়ির বেশ কদর ছিল। এ সবের সাথে যুক্ত হয়েছিল তাঁতের সুতি মশারি। এই সুতির মশারি একদিন সমগ্র বাংলাদেশে সমাদ্রিত ছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার কলের কাপড় বাজারজাত করে এক সময়ে তাঁতিদের হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত কেটে দিয়েছিল। তখন ঢাকার তাঁতিরা নিজ এলাকায় থেকে পালিয়ে রুপগঞ্জে এসে আত্মগোপন করে। অধিকাংশ তাঁতি আশ্রয় নিয়েছিলেন রুপগঞ্জের কাঞ্চন, ভূলতা, সাওঘাট এলাকায়। আত্মগোপনে থাকা এসব তাঁতিরাই গড়ে তুলেন তাঁত কারখানা। সেই থেকে রুপগঞ্জের এসব এলাকা তাঁতী এলাকা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
তাঁত বোর্ডের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১০-১২ বছর আগেও রুপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় তাঁতের সংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজারের ও বেশী। সুতা ডাইস, কেমিক্যালের সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং পুঁজি সংকটের ক্রমন্বয়ে তাঁত কারখান গুটিয়ে নেন ছোট ছোট তাঁত শিল্প কারখানার মালিক।
কাঞ্চন এলাকার সুতি মশারির কাপড় তৈরির সাথে জড়িত তাঁতিরা জানান, চোরাই পথে আমদানী করা কলের তৈরি কাপড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাঁতিরা টিকতে পারছে না। চোরাই পথে আসা নিম্ন মানের কাপড় অবাধে বাজারজাত হওয়ায় তাঁতিদের লোকসান গুনতে হচ্ছিল। সেই থেকে ক্রমন্বয়ে এখানকার তাঁতিরা বংশগত ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় নেমেছে।
রুপগঞ্জ এলাকার তাঁত ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁত ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে অর্ধেকের ও বেশী এসে ঠেকেছে। এছাড়াও গামছা শিল্প অনেক আগেই বিলুপ্তি ঘটেছে। ষাটের দশকের পর রুপগঞ্জের এলাকার তাঁত বস্ত্রকে প্রতিযোগীতায় টিকিয়ে রাখতে সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে শিল্প সমবায় সমিতির সংগঠন গুরুত্বপূর্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল প্রশিক্ষণ, অনুদান প্রধান ও তৈরি কাপড় বাজারজাত করণ। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই সীমিত কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। আর এসময়ের মধ্যে ঘটে মারাত্বক বিপর্যয়। এদেশে ব্যাপক হারে পাওয়ার লুম শিল্প গড়ে উঠার পর এ শিল্প রীতিমত থমকে দাঁড়ায়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রুপগঞ্জের দুই সহস্রাধিক তাঁতি পরিবার ছিল। বর্তমানে এখন সব মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশী তাঁত চালু নেই। আগে যেখানে লুঙ্গি, শাড়ি, গামছা তৈরি হতো সেখানে এখন তাঁতিরা শুধু মাত্র মশারির কাপড় তৈরি করে। কোন মতে পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁত ব্যবসায়ীদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেই তাঁতের মেশিন কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে। অনেকেই বা অপরিচ্ছন্ন জায়গায় ফেলে রেখেছে।
এ বিষয়ে রুপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনুশরাত জাহান জানান, এক সময়ে রুপগঞ্জের গামছা, সুতি মশারির কদর ছিল। কিন্তু এসব কিছু বিলুপ্ত হলেও কাঞ্চনে শীতের চাদর শিল্পের রীতিমত প্রসার ঘটেছে। কাঞ্চনে শীতের শাল এখন বিদেশ ও রপ্তানী হচ্ছে। তবে কারখানার তৈরি চাদরের কদর থাকলে ও গামছা ও মশারির তৈরি শিল্প বিলুপ্ত প্রায়।
আমারসংবাদ/কেএস