Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সখীপুরে নেক ব্লাস্টে কৃষকের হাঁসি ম্লান

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৯:০০ এএম


সখীপুরে নেক ব্লাস্টে কৃষকের হাঁসি ম্লান

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। বাতাসে ধান গাছের দোল দেখে কৃষকের মনেও দোলা লেগেছিল। সারা বছর খরচের পর এখন ফসল ঘরে তোলার সময়। ঠিক এই সময়ে উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্ট (গলাপচা) রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাবে ধানের শীষ আস্তে আস্তে সাদা হয়ে শুকিয়ে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। বৈশাখ মাসে ধান পাঁকতে শুরু করে। কৃষকেরা অনেক আশা করেছিলেন বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পাবেন। তবে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই নেক ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে ধানের শীষ শুকিয়ে কৃষকের মুখের হাসি ম্লান হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২৫টি ব্লকে ১৫ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে ধানের সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৪০ মেট্রিকটন। কিছু জমির ধান নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দিনের বেলায় গরম আর রাতে ঠান্ডা পড়ায় ব্রি ২৮ জাতের ধানক্ষেতে ওই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। যেসব জমি এখনও সংক্রমিত হয়নি বা কেবল সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, সেগুলোতে প্রতিরোধক হিসেবে কাসোবিন, নাটিভো ট্রপার সেলটিমা ছত্রাকনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠের অধিকাংশ ধান পাক ধরার মুখে আছে, কিন্তু ধানের শীষ সাদা হয়ে সব চিটা হয়ে যাচ্ছে। শীষের গোড়ায় প্রথমে এ রোগ দেখা দিয়ে ক্রমান্বয়ে তা পুরো শীষকে গ্রাস করছে। এই রোগটি ব্রি ২৮ জাতের ধানে বেশি আক্রমণ করছে। করোনার কারণে সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এদিকে ধানের নেক ব্লাস্ট আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার অনেক চাষি।

উপজেলার নয়া কচুয়া গ্রামের কৃষক মো. আকম আমার সংবাদকে বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। গাছ দেখে মনে হয়েছিল ফলন খুব ভালো হবে। কিন্তু হঠাৎ করে রোগে ক্ষেতের ধানের শীষগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক দিয়েও ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ওই টুকুই ধানের জমি। পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমি বউ বাচ্চা নিয়ে সারা বছর কি খাবো বুঝতে পাচ্ছি না।

উপজেলার ইছাদিঘী গ্রামের কৃষক মো.শামছুল আলম জানান, আমি ৬০ শতাংশ জমিতে ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি আমার এলাকার আরো কিছু ক্ষেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক দিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

উপজেলা কালমেঘা সুন্দলা সোনাতলী মার্কেটের আবুল বাশার জানান ৩ বিঘা জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি ক্ষেতের গলা পাচা রোগে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সারা বছর কি খাবো সেই চিন্তায় আছি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, এ অঞ্চলের বোরো খেতে মূলত দুই ধরনের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এর একটি লিফ ব্লাস্ট এবং অপরটি নেক ব্লাস্ট। লিফ ব্লাস্ট রোগটি ধানের পাতায় দেখা দেয়। আর নেক ব্লাস্ট দেখা দেয় শীষের নিচের অংশে। নেক ব্লাস্ট রোগে শীষের নিচের অংশে (গলা) কালো দাগ দেখা দেয়। পরে সেখানে পচন দেখা দেয়। এতে ধানের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। শীষের সব ধান চিটা হয়ে যায়। ট্রাইসাইক্লাজন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও এতে ফল পাওয়া যায় না। তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য মূলত ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। দিনে গরম ও রাতে শীতের কারণে বোরো খেতে এই রোগ দেখা দেয়। ব্রি ২৮ জাতের ধানে এই রোগের বেশি প্রকোপ দেখা দেয়।

উপজেলা  উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাম্পার ফলনের আশা করছি। তবে কিছু কিছু জায়গায় নেক ব্লাস্ট রোগে সামান্য ক্ষতি করছে। ইতোমধ্যে ধান পাকা শুরু হয়েছে। আমরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। এখন নেক ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম মষ আমার সংবাদকে বলেন, দিনের বেলায় গরম আর রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্রি ২৮ জাতের ধান ক্ষেতে ওই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। খুব অল্প কিছু জায়গায় বোরো ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্ট (ধানের গলাপচা) রোগের আক্রমণ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের মধ্যে পরামর্শ দিচ্ছি। এখন নেক ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

আমারসংবাদ/কেএস