Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বরগুনায় ফেয়ার প্রাইজের চাল বিক্রির ভিডিও ভাইরাল

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা

এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০১:০০ পিএম


বরগুনায় ফেয়ার প্রাইজের চাল বিক্রির ভিডিও ভাইরাল

বরগুনার আমতলী উপজেলায় ফেয়ার প্রাইজের চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন, ডিলাররা ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৬-২৭ কেজি চাল দিচ্ছেন। ফেরায় প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গরীরের চাল ওজনে কম ও কালোবাজারে বিক্রির ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করছেন উপকারভোগীরা।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতদরিদ্রের খাদ্য সহায়তায় জন্য ফেয়ার প্রাইজে চাল বিতরন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই কর্মসূচির আওতায় আমতলী উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ১'শ ৪৬ জন হতদরিদ্র উপকারভোগী অর্ন্তভুক্ত হয়। প্রতি বছর মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এ চার মাস ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল পান তারা। 

এ চাল বিতরণের জন্য উপজেলা ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচি কমিটি ২৪ জন ডিলার নিয়োগ দেন। এ বছর এপ্রিল মাসের চাল বিতরণ মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) শুরু হয়েছে। চাল বিতরণের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। উপকারভোগী হতদরিদ্ররা অভিযোগ করেন ডিলাররা ওজনে চাল কম দিচ্ছেন। ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৬-২৭ কেজি চাল দিচ্ছেন ডিলারারা। চাল ওজনে কম দেয়ার প্রতিবাদ করলে ডিলাররা উপকারভোগীদের চাল দেয়া বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ডিলারদের ভয়ে হতদরিদ্ররা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। নিরবে কম চাল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন এমন অভিযোগ উপকারভোগী খোকন, ফারুক ও সোহেলের। 

মিটারে চাল ওজন করে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও বালতি দিয়ে চাল মেপে দেয়া হচ্ছে। আরো অভিযোগ রয়েছে ফেয়ার প্রাইজের তালিকায় নাম অন্তর্ভক্ত হলেও চাল পাচ্ছে না তারা। নামে বেনামে ফেয়ার প্রাইজের তালিকা করে ইউপি সদস্য ও ডিলাররা চাল আত্মসাৎ করছেন। চাল বিতরণ কালে তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা বলেন উপজেলা ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির সদস্য সচিব সমির চন্দ্র রায় কিন্তু বাস্তবে তদারকি কর্তকর্তা উপস্থিত থাকছেন না। তদারকি কর্মকর্তা ও ডিলাররা যোগসাজসে হতদরিদ্রদের ওজনে চাল কম দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা। 

এদিকে গুলিশাখালী ইউনিয়নে গুলিশাখালী বাজারের ডিলার গোলাম মোস্তফা হতদরিদ্রদের চাল না দিয়ে সোয়া মেট্রিকটন চাল স্থানীয় আকরাম মৃধার মুদি মনোহরদি দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই চাল স্থানীয়রা আটক করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে উপজেলা প্রশাসনকে জানায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ফেয়ার প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিও ভাইরালের চার দিনেও উপজেলা প্রশাসন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডিলাররা মিটারে চাল ওজন না করে বালতি দিয়ে চাল মেপে দিচ্ছেন। 

এতে ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৬-২৭ কেজি চাল দিচ্ছে। গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী বাজারের ডিলার মোঃ আলমগীর হোসেন বালতি দিয়ে মেপে চাল দিচ্ছেন। ওই চাল মিটারে মেপে দেখা গেছে চাল ওজনে কম হচ্ছে। ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৭ কেজি চাল হয়েছে। গুলিশাখালী ও কুকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তদারকি কর্মকর্তার দেখা মিলেনি।
   
হতদরিদ্র অমুল্য মিস্ত্রি বলেন, ডিলার আলমগীর মোরে চাউল কম দেছে। মোরে ২৭ কেজি চাউল দেছে। মুই চাউল কম দেওয়ার বিচার চাই।

বাইনবুনিয়া গ্রামের খোকন মিয়া বলেন, ডিলার আলমগীর বালতি দিয়ে মেপে চাল দিয়েছে। পাশের একটি দোকানে মিটারে ওজন করে দেখি ২৭ কেজি চাল হয়েছে।
 
ফকিরখালীর গ্রামের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম, জাহানারা ও হাসিনা বলেন, মোরা বুড়া মানু মোগোও চাউল কম দেওয়া লাগে। মোগোও তিন কেজি করে চাউল কম দেছে। হতদরিদ্র দুলাল বলেন, ডিলাররা চাল ওজনে কম দিচ্ছে। 

গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী বাজারের ডিলার মোঃ আলমগীর হোসেন ওজনে কম দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে ৫০ কেজির বস্তায় দুই কেজি বেশী ধরে দিচ্ছে। ওই ঘারতি পুসিয়ে নিতে কম দেয়া হচ্ছে। 

গুলিশাখালী ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, আমি বদলি হয়ে এসেছি। তাই চাল বিতরণে উপস্থিত থাকতে পারিনি।

কুকুয়া ইউনিয়ন চাল বিতরণ তদারকি ও উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা (ট্যাগ) রবিউল ইসলাম বলেন, আমি যতক্ষণ উপস্থিত ছিলাম ততক্ষণে কম দেয়া হয়নি। আমি আসার পরে কম দিলে আমার দায় নেই। 

ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির উপজেলা সদস্য সচিব ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সমীর কুমার রায় বলেন, ফেয়ার প্রাইজে কর্মসূচির হতদরিদ্রদের ৩০ কেজির কম চাল দেয়া যাবে না। 

ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির উপজেলা সভাপতি ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, চাল কম দেয়ায় বিষয়টি মেনে নেয়া হবে না। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমারসংবাদ/কেএস