Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মাগুরা জেলা ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ অভিযান চলমান

মিরাজ আহম্মেদ, মাগুরা

এপ্রিল ১৫, ২০২১, ০৮:৫৫ এএম


মাগুরা জেলা ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ অভিযান চলমান

১৩ এপ্রিল মাগুরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘ভোক্তা অধিকার আইন’ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাগুরা জেলা শহরের নতুন বাজার, পুরাতন বাজার, ভায়না বাজার সহ কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করা হয়।

মাগুরা শহরের সকল প্রকার ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশ সরকারের ‘ভোক্তা অধিকার আইন’ এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট জনাব মোঃ কামরুজ্জামান, নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মোঃ আল ইমরান ও মোঃ আমিনুল ইসলাম, এবং মোহাম্মদ মামুনুল হাসান, সহকারী পরিচালক, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, মাগুরা।

‘ভোক্তা অধিকার আইন’ বিষয়ে মাগুরা জেলা বাসিকে সচেতন করার জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলম কয়েকটি দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। 

১। করোনা মহামারিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরিধান করা সহ সকল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন।
২। রমজানের শুরুতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
৩। মানসম্মত নয় এমন খাদ্যসামগ্রী যাতে বিক্রি না হয় তা নিশ্চিতকরণ। 
৪। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বিক্রয়মূল্য যাতে জনসম্মুখে প্রদর্শিত অবস্থায় থাকে তার বাস্তবায়নে জেলা পুলিশ, আনসার, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মিডিয়া সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং, অভিযান। 

তিনি আরো জানান, মোবাইল কোর্ট চলছে এবং চলমান থাকবে। 

এ সকল বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলম সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করেন।

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের অধিকার রক্ষায় ২০০৯ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আইন থাকলেও আইনের বাস্তবায়ন না হওয়াতে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। আইন প্রণয়নের ফলে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ভোক্তা তথা জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তা অধিকারকে নাগরিকদের সাধারণ দেওয়ানি অধিকার হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।

উন্নত বিশ্বে ‘ভোক্তা অধিকার’ নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আছে। উন্নত রাষ্ট্র গুলো বহুদিন থেকেই এধরনের আইন বাস্তবায়নের সুফল পেয়ে আসছে। নাগরিকদের ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়ে থাকে। একটি কার্যকর ভোক্তা আইনের ফলে সেসব দেশে জনস্বার্থ তথা ভোক্তা অধিকার আজ একটি প্রতিষ্ঠত বিষয়।

ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা দাম দিয়ে ভেজাল পণ্য ও সেবা ক্রয় করি। এ নিয়ে নাগরিকরা কোনো প্রতিবাদ করে না। রাষ্ট্রও নির্বিকার। কিন্তু অন্যান্য দেশে ভোক্তা অধিকার লংঘনের কথা ভাবাও যায় না।

ভোক্তা অধিকার লংঘন করলে অনেক দেশে বিক্রেতার লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করা হয়। শুধু তাই নয়, আছে ফৌজদারি দণ্ডও। তাই আইনের বাস্তবায়নটাই বড় কথা। যেকোনো দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের প্রথম পদক্ষেপ হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি। কিন্তু আমাদের মাঝে অর্থাৎ ভোক্তাদের মাঝেই সে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। ফলে, ভোক্তারা পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের অধিকার থেকে।

নকল, কেমিক্যাল, মিথ্যাচার, ভেজাল, ফর্মালিন আজ ভোগ্যপণের সাথে মিশে গেছে। এমনকি ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। মুদি দোকানে নকল পন্য, সর্বত্রই নকল প্রসাধনী, চায়না কপিরাইট মোবাইল সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস, হার্ডওয়ার পন্য সহ নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভেজাল বিদ্যমান। 

তাছাড়া সার্ভিসিং এবং ক্রয়-বিক্রয় রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। এ যেন বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা তাতে কি! বিষেও ভেজাল! এমনকি জীবনের তাগাদায় খাদ্য গ্রহণ সে বিষয়েও বাজারের শাক-সবজি, ফল-মূল সব কিছুতেই ফরমালিন। 

আইন প্রণয়নের পর বিভাগ, জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় বাজার মনিটরিং ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এ লক্ষ্যে মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে অভিযান পরিচালনার সংবাদ দেখা যায়। এটিকে আংশিকভাবে এ আইন বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু জনগণের দোড়গোড়ায় এ আইনকে পৌঁছে দিতে হবে। সচেতন করতে হবে সবাইকে।

যদিও অতি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও জনগণ এর সুফল র্কিছুটা পেতে শুরু করেছে। সরকার আইন প্রণয়ন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নামে একটি অধিদপ্তর সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে এ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৭টি বিভাগীয় কার্যালয় ও ৯টি জেলায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে সবকটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তবে, পুরোপুরি এর বাস্তবায়ন না হওয়াতে তৃণমূল ভোক্তাদের স্বার্থ এখনো পরাভূত। আইন বাস্তবায়ন না হওয়াতে ভোগান্তিতে আছে দেশের জনগণ। ভোক্তা অধিকার বলতে যে একটি বিষয় আছে সেটিই আমাদের মাঝে নেই। প্রতারণা যেনো আমাদের নিত্যসঙ্গী। খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যে ভেজাল থাকবে এটি আমাদের দেশে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। সেই সাথে ওজন ও মানের তো কোনো বালাই নেই। এমনকি  মিষ্টির ন্যায় সমমূল্য দিয়ে ভারি প্যাকেট ক্রয় করতে হয় ভোক্তাকে। অপরদিকে হোটেল ব্যবসায়ীদের তো রমরমা ব্যবসা। 

অনেক সময় পয়সা গুনেও আসল পণ্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু শাস্তিতো অনেক পরের কথা এ নিয়ে কথা বলাও অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠে।

জনগণের দীর্ঘ দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আইন ও বিধি প্রণয়ন করলেও এর বাস্তবায়ন নাই। মূলত জনগণের পক্ষথেকেই এর বাস্তবায়নের জন্য তেমন ইতিবাচক সারা নেই। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু ধরপাকর ও জরিমানা এই যা কার্যক্রম। এর বাইরে ব্যাপকহারে জনগণের মাঝে তেমন কোনো সারা নেই। ফলে এর সুফল পেতে হলে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্ব প্রথম।

কিন্তু জনগণের এ দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে অনৈতিক লাভ করে যাচ্ছে অতি মুনাফাখোর একটি সংবদ্ধ পাইকারি পরিবেশক, ইত্যাদি সিন্ডিকেট মহল। এ চক্র ভেদ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা প্রায় দুরুহ।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আইন আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বিএসটিআই, অধ্যাদেশ ১৯৮৫, অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রী আইন ১৯৫৬, নিরাপদ খাদ্য আইন ১৯৫৯, পণ্য বিক্রয় আইন ১৯৩০, ওজন ও পরিমাপ আইন ১৯৮২ ও এক্রেডিটেশন বোর্ড আইন ২০০৬। সবগুলো আইনেই ভোক্তা অধিকারের কথা বলা আছে।

আমারসংবাদ/কেএস