ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৫, ২০২১, ১১:০০ এএম
করোনার ছাপ পড়েছে কুমার পল্লীতে। আসছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নেই কোন দৌর ঝাপ। অথচো পহেলা বৈশাখ এলেই মৃৎ শিল্পীদের রঙয়ের তুলিতে ফুটে উঠতো এক সময়ের হারিয়ে যাওয়া বাঙ্গালীর ঐতিহ্য।
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় হাতে গোনা রয়েছে কয়েকটি কুমার পরিবার। বৈশাখ আসার কয়েক মাস আগে থেকে সারাটা দিন তাদেরকে মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো। করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর দ্বিতীয় ঢেউয়ের অঘাত লেগেছে বিলুপ্তীর পথে হাড়িয়ে যাওয়া মৃৎশিল্পের উপর। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্পটির অকালমৃত্যু ঘটতে পারে এমনই আশন্কা করছেন কুমার পরিবারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তারা।
সরেজমিনে কুমার পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে সুনশান নিরবতা। বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে তাদের নেই কোন প্রস্তুতি। একদিকে মহামারি করোনা অন্যদিকে লকডাউন। মাটির তৈজসপত্র বিক্রি শুণ্যের কোঠায় নেমে আসায়, সংসার চালাতে গিয়ে রিতিমত হিমসিম খাওয়া এই পরিবার গুলোর কপালে পরেছে ভাঁজ।
বাড়ির উঠুনে খোলা আকাশের নিচে মাটির হাঁড়ি পাতিল নিয়ে ক্রেতা শুণ্য দোকানে বসে থাকতে দেখা গেলো ষাটোর্ধ বয়সী শ্রীমতি রজলী পালকে। দেকানে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মাটির থালা, প্রদীপ, ভাপা পিঠার খুলিসহ অনেক কিছুর দেখা মিল্লো সেখানে। যার অনেককিছু যান্ত্রিক সময়ের চাপে হাড়িয়ে গেছে। অথচ এক সময় বাংলার হাড়িয়ে যাওয়া মাটির এসব জিনিষপত্র ছাড়া গৃহস্থালীর কাজ কর্ম করা প্রায় অসম্ভব ছিল।
এ সময় বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মাটির ব্যাংক প্রকার ভেদে ১০ থেকে ৬০ টাকা, পাতিল ২০ থেকে ৪০ টাকা, গরুর খাবারের জন্য চারি ৩০ থেকে ৬০ টাকা, পানি রাখার কলস ৪০ টাকা, কবুতরের ঘর ১৫ টাকা, পাতিলের ঢাকনা ১০ থেকে ৩০ টাকা, মাটির ফুলদানি প্রকার ভেদে ২০ থেকে ৫০০ টাকা, ছোট বাচ্চাদের খেলনা প্রতি পিচ ১০ টাকা, মাটির থালা ৪০ থেকে ১৫০ টাকা, মগ ২০ থেকে ৮০ টাকা ফুলের টব ২০ থেকে ১০০ টাকা, বাটনা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, সাত পিঠার বাটি ৪০ টাকা, পানের বাটা ৩০ টাকা ও মাটির প্রদীপের মুল্য মাত্র ২০ টাকা রাখা হয়েছে।
তবে মাটির দুষ্প্রাপ্যতার সাথে শ্রমিকের মুল্য বৃদ্ধির কারণে মাটির তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রয়ে খুব একটা লাভের মুখ দেখছেননা তারা।তাদের অভিযোগ সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগীতা না পেলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা কখনোই সম্ভব হবে না।
মৃৎশিল্পের জাদুকর রামায়ণ প্রসাদ পাল বলেন, বাবু আমি এখন আমার বংশের ১৪তম পুরুষের হাল ধরে আছি। আমার তিন ছেলে বড় ছেলে মহেশ কুমার পাল এবং ছোট ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল। মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছেলেদের কাজ করতে বললেই বলে বাবা, মৃৎশিল্প দিয়ে আমাদের জীবন সংসার চলবে না। প্রয়োজনে মাঠে কাজ করবো, ভ্যান রিক্সা চালাবো ইত্যাদি বলে এড়িয়ে যেতো, তবে আমার দ্বিতীয় ছেলে সন্তোষ কুমার পালই আমার বংশের একমাত্র শেষ ভরসা, কেবল মাত্র সেই আমার ১৪ পুরুষের হাল ধরে আছে।
শুধু বৈশাখ নববর্ষ এলেই সাহেব বাবুদের আমাদের কথা মনে পরে। বিশেষ করে পান্তা-ইলিশে আমাদের মাটির থালা দরকার হয়। এখন কেউ মনে রাখে না। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন আমাদের দিকে নজর না দিলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। অক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শ্রীমতি রজলী পাল।
আমারসংবাদ/কেএস