Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শ্রীপুরের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা, মাছ-সবজির বাজারে সুনসান নিরবতা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি 

এপ্রিল ১৬, ২০২১, ১০:৪০ এএম


শ্রীপুরের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা, মাছ-সবজির বাজারে সুনসান নিরবতা

গাজীপুরের শ্রীপুরের সড়কগুলো ফাঁকা। কিছু সময় পরপর পণ্যবাহী ট্রাক ও কয়েকটি যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। কেবল সড়কের মোড়ে মাড়ে পুলিশের সদস্য ছাড়া তেমন লোকজনের চলাচল নেই। দু-একটি রিকশা, তিন চাকার যান ও মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহনও নেই। শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালে সুনসান নীরবতা। ফাঁকা সড়কের কয়েকটি মোড়ে যাত্রীরা যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সারা দেশে আট দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন চলছে আজ শুক্রবার। তৃতীয় দিনে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন বা যাত্রীদের গন্তব্য কোথায়, তার সঠিক কারণ জানতেছেন। যাত্রীর অজুহাতে সন্তুষ্ট হলে যান ছেড়ে দিচ্ছেন, নয়তো আটকে দিচ্ছেন। মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে তল্লাশিচৌকি পার হয়ে মাওনা কাচা বাজারে গিয়ে দেখা গেল সুনসান নীরবতা। বাজারে সবজি, ডিম, মাছ, মুরগি সবই আছে। কিন্তু ক্রেতা নেই।

মাওনা চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আনোয়ার হোসেন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছি। তবে কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন করা এক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক টাকা চেয়েছেন। বেশি টাকা সঙ্গে না থাকায় আরও একজন পাওয়া যায় কি না, দেখছি। তিনি বলেন, গ্যাস চালিত সিএনজিও একই ভাড়া চেয়েছে। তবে চালক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। পথে পুলিশ যদি নামিয়ে দেয় এ ভয়ও আছে তাদের। তারপরও জরুরি কাজ থাকায় যেতেই হবে। 

ঢাকা-ময়মনসিংহের মহাসড়কের নয়নপুর এলাকার বাস ষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক নব দম্পতি। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লক ডাউনের আগে শ্রীপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসছিলাম। তাঁরা থেকে যেতে বলেছেন। লকডাউনে আটকা পড়েছিলাম। অন্যের বাড়িতে এত দিন বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আজ শুক্রবার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা চলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি। এখানে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি, যখন তাদের সাথে কথা হয় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ট্রাক বা অন্য কোনো পরিবহন পাওয়া গেলে সেটি দিয়েই বাড়ি ফিরে যাব।

মাওনা চৌরাস্তা কাচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ফারুক শেখ বললেন, বাজারে তেমন লোকজন আয় না। লকডাউন দিয়ে লোকজন ঘর থেকে বাইর (বাহির) হতে না পরালে বাজারে আইব কেমনে। বাজারে লোকজন না আইলে আমরা বেচমু (বিক্রি) কার কাছে। কাচা বাজারের ব্যবসাীয়দের অবস্থা খুব খারাপ। দিনের মাল দিনে বিক্রি করতে না পারলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। দিন শেষে লোকশান গুনতে হয়। 

মাওনা বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব বলেন, লকডাউন দেওয়ায় ব্যবসা লাটে উঠছে। মানুষজন ঘর থেকে বের হতে না পরালে কার কাছে বিক্রি করবো। মানুষের ইনকাম (আয়-রোজগার) না থাকলে কী টাকা হাতে থাকে? আর হাতে টাকা না থকালে বাজার করব কি দিয়া। লকডাউন শুরুর প্রথম দিন ভালই বেচা-কেনা ছিল। আজকে খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। 

শ্রীপুর পৌর শহরের কাচা বাজারে গিয়ে দেখা গেল, এমনই অবস্থা। ক্রেতা নেই। শিল্প কারখানা অধ্যুষিত শ্রীপুরের প্রতিটি বাজারেই শুক্রবারে ক্রেতা-বিক্রেতায় হাঁটা যেতো না। তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন তেমন ক্রেতা সমাগম নেই।

শ্রীপুর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন বাজারে আসতে চায় না। যারা আসেন, তাদের পকেটের অবস্থা হইতো আগের মতো ভাল না। তাই, দরদাম করে মিলে গেলে বাজার সদায় কিনে নিয়ে যান। না হলে বাজার থেকে খালি হাতেই চলে যাচ্ছেন। পকেটের অবস্থাই তো খারাপ। তাঁরা আগের মতো কেনাকাটা করেন না। এমসি বাজার, নয়নপুর বাংলাবাজার, জৈনা বাজার ঘুরে মনে হলো সর্বাত্মক লকডাউন যথাযথভাবেই চলছে। 

বরমী বাজারের পাইকারি কাঁচা বাজারে মোটামুটি ভীড় দেখা গেল। লোকজন গায়ে গা-ঘেঁষে যে যার মতো বাজার করছেন। তাঁদের কেউ কেউ মাস্ক পরা। আবার কেউ মাস্ক খুলে পকেটে ঢুকিয়ে বাজারে প্রবেশ বরছেন, আবার অনেককে দেখা গেল থুতনিতে মাস্ক পড়ে আছেন। মুখের নিচে মাস্ক নামিয়ে একজন ক্রেতা মাছের দাম করছিলেন। মাস্ক এভাবে পরলে লাভ কী? জানতে চাইলে মুচকি হেসে বললেন, এত ভিড়, মাস্ক নাকে তুললে দম আটকে আসে, তাই থুতনির নিচে দিয়ে রাখছি। স্বাস্থ্যবিধি বলে কিছুই দেখা গেল না এখানে।  

মাছ কিনতে আসা মাওনা এলাকার এক পোশাক কারখানার ষ্টোর অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, আড়তে ঢুকলে করোনার কথা ভুলে যেতে হয়। এখানে কোনো করোনা নেই। তিনি মন্তব্য করে বলেন, এতো ভয় নিয়ে জীবনে চলা যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, মাওনা চৌরাস্তা আড়ত থেকে মাছ কিনে খুচরা বিক্রি করেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ অন্য বাজারে নিয়ে যান। প্রতিদিন সকালে আড়তে ভিড় থাকে। আড়তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব না। 

স্বাস্থ্যবিধির না মানার ব্যাপারে জানতে চাইলে মাওনা বাজারের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিন এতো লোক আসে, কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করবে বলেন? আমরাও চাই সকলেই সব সময়ই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুক। 

শ্রীপুরের মাওনা উড়াল সেতুর নিচে দায়িত্ব পালন করছেন শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, শ্রীপুর থানা পুলিশের উদ্যোগে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জৈনা বাজার, শ্রীপুর চৌরাস্তা ও মাওনা চৌরাস্তায় তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। ভোর থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্দেশিত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করছে পুলিশ। প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে সহযোগিতা করছে পুলিশ। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকারের নির্দেশিত যানবাহন চলছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুরিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) রাসেল শেখ বলেন, পুলিশের তৎপরতা আগের মতোই আছে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে অপ্রয়োজনীয় চলাচল রোধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া দোকানপাট বন্ধ রাখার ব্যাপারে অভিযান চালানোসহ জনসাধারণকে সব সময়ই সতর্ক করা হচ্ছে। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম বিভিন্ন থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। যদি নির্দেশনা অমান্য করে কোনো গাড়ি মহাসড়কে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লকডাউন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে।

আমারসংবাদ/কেএস