Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বরিশালে আক্রান্ত-মৃতদের বাড়ি লকডাউন না করায় বাড়ছে সংক্রমণ

বরিশাল প্রতিনিধি 

এপ্রিল ১৬, ২০২১, ০১:১৫ পিএম


বরিশালে আক্রান্ত-মৃতদের বাড়ি লকডাউন না করায় বাড়ছে সংক্রমণ

বরিশালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ভাইরাসটিতে মৃত্যুবরণ করা কারও বাড়ি লকডাউন করেনি স্থানীয় প্রশাসন। এমনকি জেলায় মোট আক্রান্তের ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ রোগী বাড়িতে অবস্থান করলেও লকডাউনের আওতায় আনা হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন বেড়েই চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। 
সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলায় বিগত ১১ দিনের মধ্যে সাতদিনই সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে গত ১ এপ্রিল ২৯ জন, ২ এপ্রিল ২৪ জন, ৩ এপ্রিল ৩২ জন, ৪ এপ্রিল ৩৪ জন, ৫ এপ্রিল ৪৮ জন, ৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ৭ এপ্রিল ১০৭ জন, ৮ এপ্রিল ১৪ জন, ৯ এপ্রিল ৬৯ জন, ১০ এপ্রিল ৮৯ জন এবং ১১ এপ্রিল ৩১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই ১১ দিনে করোনা শনাক্ত হওয়া ৫৪১ জনের মধ্যে মাত্র ২৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৫১৪ জন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

সচেতন মহলের দাবি, বরিশালে হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ আক্রান্ত বা মৃত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন না করা। করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাপে সরকারের এই নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করা হতো। অথচ এখন কেন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর প্রতি উদাসীনতা দেখানো হচ্ছে তা রহস্যঘেরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীরা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে নিত্যদিনের বাজার করেন। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করেন। আক্রান্ত বা মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। অনেকেই নিকটস্থ বাজারে নিয়ম করে চা খেতে যান এবং বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে আড্ডা দেন। এতে করে অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইন প্রয়োগ করা অতি জরুরি। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৭ এপ্রিল বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুবরণ করেন আব্দুল খালেক।

তার ছেলে শাহীন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন থেকে আমাদের বাড়ি লকডাউনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। লকডাউন না দিলেও পরিবারের সবাই আমরা সচেতনতা অবলম্বন করে চলছি। একইভাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনদিন চিকিৎসাধীন থেকে গত ৯ এপ্রিল মারা যান নগরীর নিউ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন (৮২)। 

তার ছেলে দিপু জানান, বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের কেউ করোনা আক্রান্ত না থাকলেও নিজেদের সচেতনতায় বাইরে যাওয়া আসা কম করছেন। তবে প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়নি। 

এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রথম ঢেউয়ে ভর্তি হওয়া সর্বশেষ রোগী ছিলেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা এক নারী। তিনি ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এরপর থেকে এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কোনো রোগী ভর্তি ছিল না। কিন্ত চলতি বছরের গত ৭ মার্চ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সেই থেকে সংক্রমিত হয়ে বর্তমানে এখানে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। 

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৯ মার্চ বরিশালে প্রথম রোগী শনাক্তের পর থেকে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৫১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ২২৩ জন। জেলার ১০টি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখনও পর্যন্ত একটি বাড়িও লকডাউন করা হয়নি। 

এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, ‘আক্রান্তদের তথ্য আমরা জানিয়ে থাকি। কিন্তু লকডাউন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’ 

করোনায় আক্রান্ত কিংবা মারা যাওয়া রোগিদের বাড়ি লকডাউন সম্পর্কে বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক করোনা আক্রান্ত বা মৃত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া আছে। করোনা আক্রান্ত বা মৃত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে এটিই স্বাভাবিক। লকডাউন কার্যকর করবে জেলা প্রশাসন। 

এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান। জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘গত বছরে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ এলাকায় ঢুকতে দিত না দেশে এমন ঘটনাও ঘটেছিল, অপনাদের হয়তো সে ঘটনাগুলো মনে আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে পরিবারটিকে লকডাউন করা হয় সেই পরিবারটি সম্পূর্ণরূপে অসহায় হয়ে পড়ে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার নির্দেশনা রয়েছে।’ 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘করোনায় মারা যাওয়া বা আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য আমাকে দিলে আমি ওই বাড়িটি লকডাউনের ব্যবস্থা করবো। তাছাড়া লকডাউনের বিষয়ে সিভিল সার্জন, পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে সকলের দায়িত্ব রয়েছে। সবার সহায়তায় এটি নিশ্চিত করতে হবে।’

আমারসংবাদ/কেএস