Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কাঠালিয়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে কৃষকের মৃত্যু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

এপ্রিল ২০, ২০২১, ০১:০৫ পিএম


কাঠালিয়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে কৃষকের মৃত্যু

ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়া গ্রামে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মানিক ব্যাপারী (৪৭) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নিজ বাড়িতেই ওই কৃষক মৃত্যুবরণ করেন। 

স্বজনরা জানান, রাত থেকেই তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সকালেই তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নেয়ার অবস্থা ছিলো না। বাড়িতে তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছিলো। দুপুরের দিকে কয়েকটা খিচুনি দিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

জানা গেছে, ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৭৫ জন রোগী কাঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এছাড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, কাঠালিয়া সদর ও আওরাবুনিয়া ২টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটে রোগীদের সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় ওয়ার্ড, ওয়ার্ডের মেঝ, বারান্দাসহ হাসপাতালের সিঁড়িতেও ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত শুক্রবার থেকে তা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেড না থাকায় ওয়ার্ড, ওয়ার্ডের মেঝ, বারান্দাসহ হাসপাতালের সিঁড়িতে বিছানা পেতেছেন। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। মেঝের নোংরা ও অপরিছন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। 

চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানান, বেড না থাকায় মেঝের নোংরা পরিবেশে তাদের থাকতে হচ্ছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, যা আছে তাও অনেক নোংরা। টয়লেটে যাওয়ার জন্য সিরিয়ালে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। যা ডায়রিয়া রোগীদের জন্য খুব কষ্টের।

হেতালবুনিয়া গ্রামের নাজমীন বেগম জানান, আমার মেয়ে (তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী) রেজবীকে সকালে বমি ও পাতলা পায়খানা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কোন জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে আছি। হাসপাতাল থেকে একটি স্যালাইন দিয়েছেন, তারপর বাহিরের দোকান থেকে কিনছি। কিন্তু এখন দোকানেও স্যালাইন নাই। এখন মেয়েকে নিয়ে মহা চিন্তায় আছি।

হাসপাতালের সামনের কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, বিগত ত্রিশ বছরেও হাসপাতালে এতো ডায়রিয়ার রোগী দেখিনি। অর্ডার দিয়েও তিন দিন ধরে কোন কোম্পানী স্যালাইন সরবরাহ করছে না। যে কারণে আমাদের কোন দোকানেই কলেরার স্যালাইন নেই।

মেডিকেল অফিসার ডা: ইমরান খান জানান, গত শুক্রবার থেকে হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ মেঝে, বারান্দা এমনকি সিঁড়িতে রোগীরা অবস্থান নিয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি কিন্তু প্রয়োজনীয় স্যালাইন সংকট ও ডায়রিয়া সংশ্লিষ্ট সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও মেট্রোনিডাজল ইনজেকশনসহ অন্যান্য ওষুধ না থাকায় ভর্তিকৃত রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। তরে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন আছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাপস কুমার তালুকদার জনান, প্রতিদিন গড়ে ৬০/৭০ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালে যে স্যালাইন মজুত ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনের এমপি বজলুল হক হারুন ২হাজার স্যালাইন দিয়েছে। তা দিয়ে বর্তমানে রোগিদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার জন্য সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি।

আমারসংবাদ/কেএস