এপ্রিল ২২, ২০২১, ০৯:৫৫ এএম
প্রায় ২২ বছর আগের পুরনো পিলারের ব্যাজমেন্টের উপর কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে দায়সারা ভাবে তৈরি করা হচ্ছে নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান গেটটি। ফলে যে কোন সময় ফটক ধ্বসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
নিয়ম অনুযায়ী একেবারে ছোট কোন কলামেও নূন্যতম ১৬ মিলি রড ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও এখানে এত বিশাল গেটে ১২ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও ওই কার্যালয়ের ভেতরে প্রায় ৫৫০ গজ দূরত্বে প্রায় ১২ মিটার প্রশস্তে রাস্তার ইটের সলিং তুলে সেই পুরাতন ইটের খোয়া দিয়ে রাস্তাটি ঢালাই দেওয়া হয়েছে। পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার রাস্তার ঢালাই কাজে দেওয়া হয়নি রড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ২২ বছর পূর্বে এ কার্যালয়ের প্রধান গেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময় ৬ ফুট উচ্চতার এ ফটকের দুই পিলারের বেইজমেন্ট দেয়া হয়। পুরনো বেইজমেন্টের ওপর পিলার দুটির উপরাংশের এক থেকে দেড় ফুট ভেঙে তার সাথে ১২ মিলি রড সংযুক্ত করে ১৬ ফুট এ উচ্চতায় পিলার দুটি নির্মাণ করা হয়। গেটটির উপরের মাথায় গার্ডার তৈরি করে এর উপর কার্যালয়ের সাইনবোর্ডের জন্য একটি স্লাবের ঢালাই সম্পন্ন করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, এ কাজের ঠিকাদার নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু।
[media type="image" fid="121115" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। তিনি বলেন, গেটটির নির্মাণ কাজের বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি।
জানতে চাইলে জেলা এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান গেট নির্মাণের কাজটি আমরা করছি না। এসব কাজ আমাদের না। আমরা তো রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করি।
পরে আবারও কল করে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমানকে ভুল তথ্য দেয়ার বিষয়ে অবগত করে কাজের সত্যিকার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, আমরাই বাস্তবায়ন করছি। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার আছে। তিনি সব বিষয় দেখাশোনা করছে। তবে বাজেট ইস্টিমিট দিয়েছে বদলি হয়ে যাওয়া এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী।
কাজের এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কৃষির মানুষ, কৃষি বুঝি। কিভাবে গেট নির্মাণ করলে ভাল হবে সেটা বুঝে ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবে করাচ্ছি। কাজের ঠিকাদার টুকু সাহেব। উনার সাথে কথা বলুন।
গেট নির্মাণের বরাদ্দ কত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি রেগে গিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, কিছু বলবো না। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন, তাহলেই কেবল সব তথ্য দেব। আসলে আপনার কোন কাজ নাই। এখানে তো আরো কত সাংবাদিক আছে। তারা কেউ তো এমন প্রশ্ন করে না। বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
তবে এখানে থেমে থাকেননি তিনি। প্রতিবেদকের নাম্বার তুলে দেন এ কাজের ঠিকাদার ঠিকাদার গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু'র হাতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই টুকু'র ছোট ভাই পরিচয়ে রাজিব নামে এক যুবক ফোন করে বলেন, ফ্রি থাকলে বিকালে দিকে অফিসে আসেন। চা খাওয়ার পাশাপাশি আপনার সাথে কথা বলবো।
যা বলার ফোনেই বলেন বললে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন টেনে নেন মোজাম্মেল হোসেন টুকু। তিনি বলেন, আমি টুকু। আমার নামটা শোনার পরেও আপনি বিষয়টা নিয়ে কথা বলছেন।
পুরো বিষয়টি জানালে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
আমারসংবাদ/কেএস