Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বৈশাখের তপ্ত রোদে একটুখানি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া

মিজানুর রহমান, মণিরামপুর (যশোর):

মে ৫, ২০২১, ০৭:১৫ এএম


 বৈশাখের তপ্ত রোদে একটুখানি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া

বসন্ত শেষে গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভায় মুগ্ধ হননি এমন কাউকেই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বড় দীঘিরপাড়, স্কুল কলেজ প্রাঙ্গণ, পার্ক কিংবা রাস্তার ধারে এই ফুল যেন দূর থেকে সবাইকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে।

পড়ন্ত বেলায় কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে ভালবাসার টানে মিলিত হয় প্রেমিক যুগল। গাছের নিচে গেলেই মনে হয় যেন প্রিয়তমার কানে কানে বলি ভালোবাসি ভালোবাসি। তাইতো কবি বলেছেন, এই সেই কৃষ্ণচূড়া, যার তলে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ, হাতে হাত, কথা যেত হারিয়ে। সত্যিই এ ফুল যেন হৃদয় রঙিন করে দেয় অনায়াসে।

বৈশাখে আকাশে যখন গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রৌদ্দুরে তপ্তবাতাস, প্রকৃতি যখন প্রখর রোধে পুড়ছে তখন কৃষ্ণচূড়া ফুল জানান দিচ্ছে তার এই অপরুপ সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের রুক্ষতা ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। তাইতো বুদ্ধদেব গুহ তার ‘সবিনয় নিবেদন’ গ্রন্থে বলেছিলেন বসন্ত প্রেমের ঋতু আর গ্রীষ্ম কামের। তার কথার উপর ভিত্তি করেই প্রকৃতি প্রেমিকরা বলেন, কৃষ্ণচূড়া প্রেম এবং কাম দুটোকেই অত্যন্ত প্রলুব্ধ করে।

প্রতি বছর এই সময় কৃষ্ণচূড়া ফোঁটে গাছে গাছে। এবারো ফুঁটেছে তার আপন মহিমায়। কিন্তু বিধি বাম! চলছে করোনা মহামারি, তার উপর লকডাউন, স্কুল কলেজ বন্ধ, বের হতে পারছে না স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা। তাই এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সকলেই। 

সরেজমিনে মণিরামপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস এবং মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাস কৃষ্ণচূড়ার লাল আভায় যেন রঙিন হয়ে উঠেছে। কথা হয় ফতেয়াবাদ গ্রামের সাবেক মণিরামপুর কলেজের ছাত্র আল আমিনের সাথে। তিন বলেন, আগে গ্রীষ্মের এই সময় কলেজ ক্যাম্পাসে আসলে দেখা যেত কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে বসে পথিক প্রসান্তির পরশ বুলিয়ে নিচ্ছেন আপন মহিমায়। প্রচন্ড তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে অবাক বিষ্ময়ে উপভোগ করছেন এই অপরুপ সৌন্দর্য। 

কৃষ্ণচূড়াকে আমরা লাল রঙেই বেশি দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালে ভদ্রে। 

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। তবে বর্তমানে এটা পৃথিবীর সর্বত্রই কমবেশি জন্মে। কৃষ্ণচূড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম উবষড়হরী ৎবমরধ এবং এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অর্ন্তভূক্ত একটি বৃক্ষ।

আগে মণিরামপুরসহ আশপাশে তাকালেই কৃষ্ণচূড়া গাছ চোখে পড়তো প্রায়ই। কিন্তু বর্তমানে এ গাছের দেখা মেলা ভার। মণিরামপুরে উত্তর মাথা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মৃত অনিল ঘোষের বাড়ির সামনে প্রচুর বড় বড় গাছ ছিলো। কিন্তু সেগুলো আজ বিলীন। বর্তমানে ছোট্ট একটা গাছ থাকলেও কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটেছে এলাকা আলোকিত করে।

আজ বৃক্ষনিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে মণিরামপুরে রঙিন এই গাছ। এই গাছের কাঠ বেশি দামি না হলেও ফুল মানুষকে বিমোহিত করে আপন মহিমায়। তাইতো আজ সৌন্দর্য পিপাসুরা তাদের নিজ নিজ আঙ্গিনায় বা বাড়ির গেটে এই ফুল গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এক সময় এই গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন পরিবেশবাদীরা। তাইতো প্রকৃতির সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমিরা।

আমারসংবাদ/এমএস