Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রায়হান হত্যার সূত্রপাত ইয়াবা বেচা-কেনা

সিলেট ব্যুরো

মে ৫, ২০২১, ০৯:২০ এএম


রায়হান হত্যার সূত্রপাত ইয়াবা বেচা-কেনা

ঘটনার দিন রাতে সিলেটের বন্দরবাজার কাষ্টঘর এলাকার একটি সুইপার কলোনিতে অবস্থান করছিলেন পুলিশের নির্যাতনে নিহত যুবক রায়হান আহমদ (৩৩)। ওই কলোনি থেকে ৪ পিছ ইয়াবা কেনেন সাইদুল শেখ ও রনি শেখ নামের দুই যুবক। ক্রয়কৃত ইয়াবা আসল না নকল তা নিয়ে ক্রেতা সাইদুল শেখ ও রনি শেখকে মারধর করে তাদের টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেন রায়হান। এ ঘটনায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির সদস্যরা রায়হানকে আটক করে। এ সময় পুলিশের সাথে দস্তাদস্তিসহ খারাপ ব্যবহার করেন রায়হান। এর জেরেই পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়।

দীর্ঘ সাত মাস তদন্ত শেষে বুধবার (৫ মে) আলোচিত এই হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিলের পর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই সিলেট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ন কবীর জানান, গত বছরের ১১ অক্টোবর রাত পৌণে দুইটার দিকে সাইদুল শেখ ও রনি শেখ নামের দুই ব্যাক্তি কাস্টঘরে সুইপার কলোনিতে গিয়ে ৬০০ টাকায় ৪ পিছ ইয়াবা ক্রয় করেন। এ সময় সুইপার কলোনীতে অবস্থান করছিলেন রায়হান। বিক্রি করা ইয়াবা আসল নয় এ নিয়ে সাইদুল শেখের নিকট থেকে একটি মোবাইল ও ৯৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার পর বন্দরবাজার এলাকার মাশরাফিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে বন্দরবাজার ফাড়ির দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। সাইদুল শেখ অভিযোগে বলেন, পুলিশ সদস্য পরিচয়ে মারধর করে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে রায়হান।

পুলিশ সুপার মো. হুমায়ন কবীর বলেন, এই অভিযোগের ভিত্তিতে সুইপার কলোনীর চুলাই লালের ঘর থেকে ভিকটিম রায়হানকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন রায়হান। পরে বাসা থেকে টাকা এনে সাইদুল শেখের টাকা ফেরত দিতে এবং ছিনতাই ও পুলিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় ফাঁড়িতে তাকে মারপিট করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর ভোরে আহতাবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ন কবীর বলেন, রায়হানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা ছিল। সেটি পরবর্তীতে বিচার কাজ শেষ হয়। এরপর ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয়। সেটি বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, রায়হান মাদক বেচা-কেনার সাথে জড়িত কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কাস্টঘর এলাকায় সবসময় তার আসা যাওয়া ছিলো। ঘটনার দিন রাতেও তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।

পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, আমরা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। মামলার ১৯৬২ পৃষ্টার চার্জশীটে ৬৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, চার্জশীটে অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ পুলিশ সদস্যই জেলহাজতে রয়েছেন। পুলিশের বাইরে আলামত নষ্টকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক রয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তারে সবরকম চেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, আলোচিত এ মামলাটির আসামি পুলিশ হওয়ায় নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে একটি নির্ভুল ত্রটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য চার্জশীট তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে। আভিযোগপত্রে আমরা রায়হানের সাথে অভিযুক্ত এসআই আকবরসহ বাকি কারো কোনও পূর্ব শত্রুতা ছিলা কি না তা খতিয়ে দেখেছি। অভিযোগপত্রে পাঁচ পুলিশসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সিলেট আদালতের ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাস বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলায় ১৯৬২ পৃষ্ঠার একটি চার্জশিট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জমা দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলার কারণে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হচ্ছে না।

চার্জশীটে বন্দর বাজার ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ এসআই আকবরসহ তিনজনকে সরাসরি নির্যাতনের সাথে সম্পৃক্ত, দুইজনকে আলামত নষ্ট করা ও একজনকে তথ্য গোপন করার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।  

অভিযুক্তরা হলেন, সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ (বরখাস্তকৃত) এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল মো. হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিুট চন্দ্র দাস, এসআই মো. হাসান উদ্দিন ও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যুবক আব্দুল আল নোমান। অভিযুক্তদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান ছাড়া সবাই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

চার্জশিটে অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভুঁইয়া, আশেক এলাহী ও টিটু চন্দ্র দাসকে সরাসরি নির্যাতনের সাথে সম্পৃক্ত থাকায়, তথ্য গোপনের অপরাধে হারুন অর রশিদ ও আলামত গায়েবের অপরাধে হাসান উদ্দিন আহমদ ও আব্দুল্লাহ আল নোমানকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে নগরের কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে এনে নির্যাতন চালানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়লে পরদিন ভোরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

আমারসংবাদ/কেএস