Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ঈদে বাড়ি ফেরার পথে পদ্মার চরে সন্তান প্রসব

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

মে ১০, ২০২১, ০৭:৫০ এএম


ঈদে বাড়ি ফেরার পথে পদ্মার চরে সন্তান প্রসব

লকডাউনের মধ্যে পরিবারের সাথে ঈদ করতে পায়ে হেটে বাড়ি ফেরার পথে পদ্মার মাঝির চরে সাত মাসের এক প্রসূতি সন্তান প্রসব করছেন। 

রোববার (৯ মে) বরিশালের হিজলা থানার পূর্ব শ্রীপুর গ্রামের মো. নাহিদ (২৩) এর স্ত্রী সুরমা বেগম (১৯) এই কন্যা সন্তান জন্ম দেন। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান পদ্মার চরে জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখেন মারিয়ম আক্তার পদ্মা। 

জানা যায়, বরিশাল জেলার হিজলা থানার পূর্ব শৃপুর গ্রামের মোঃ নাহিদ (২৩) ও বরগুনা জেলার আমতলী থানার সুরমা বেগম (১৯) এর গত এক বছর পূর্বে সম্পর্ক করে বিয়ে হয়। নাহিদ ঢাকার একটি স্টীলের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। সেই সুবাদে তারা ঢাকার লালবাগের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সুরমা বেগম সাত মাসের প্রসূতি থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে এবং সুরমার দেখাশুনার কেউ না থাকায় রোববার সকাল ৬ টায় ঢাকার লালবাগ থেকে বরগুনার আমতলীতে অবস্থিত সুরমা বেগমের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। অনেক কষ্টে দুপুর ১ টার দিকে মাওয়া ঘাটে এসে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটের অদুরে একটি ট্রলারে করে পদ্মা নদীর মাঝে মাঝির চরে নামেন। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টার পথ পায়ে হেটে মাঝিরঘাট দিয়ে বাড়ির পথে ফেরার পরিকল্পনা করেন। চরের অপর প্রান্তে আরেকটি ট্রলারে করে মাঝিরঘাটে উঠবেন তারা। প্রায় দুই ঘন্টা হাটার কারণে জুন মাসের ১১তারিখ ডেলিভারির তারিখ থাকলেও সুরমা বেগমের প্রচন্ড প্রসব বেদনা ওঠে। অনেকদুর হেটে তারা কয়েকটি বাড়ি দেখে সেখানে যান এবং স্থানীয়দের সহায়তা চান। স্থানীয়রা তাদেরকে সহায়তা করেন এবং মহিলারা বাচ্চাটি সুস্থ্ভাবে প্রসব করাতে সক্ষম হয়। 

স্থানীয়দের কাছে দ্রুত সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর লোকজন আসতে থাকে এবং মাঝিরঘাটের রাজ্জাক মাঝি ও স্থানীয়রা বাচ্চাটির জন্য জামা-কাপড় কিনে দেন ও সবাইকে মিষ্টিমুখ করান। পরে সংবাদকর্মীদের কাছে খবর পেয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া সাথে সাথে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসানকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। 

ডা. মাহমুদুল হাসান সাথে-সাথে একটি নৌ-অ্যামবুলেন্স প্রেরণ করে বাচ্চা ও বাচ্চার বাবা-মাকে মাঝীরঘাটে এনে সেখান থেকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করেন। মা ও শিশু উভয়ই সম্পূর্ণ সুস্থ্য রয়েছে। পরে তাদেরকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশষরাফুজ্জামান ভূঁইয়া বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় কিছু আসবাবপত্র (বেবি সেট), মিষ্টি ও কিছু ফল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান। 

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের হাসপাতাল থেকে তাদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাব এবং আমরা বাচ্চা ও বাচ্চার মায়ের যাবতীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের সার্বিক দেখা-শুনা করার পাশাপাশি যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ্য না হলে আমরা ছাড়বো না। 

জাজিরা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমরা বাচ্চাটির প্রাথমিক চিকিৎসা সহ যাবতীয় খরচ বহন করব। এমনকি বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও আমদের। 

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই পদ্মার চরে জন্ম নেয়া শিশুটির ভবিষ্যতে পড়াশুনার ব্যাপারে তিনি দায়িত্ব নিবেন।

আমারসংবাদ/কেএস