Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

জনগণের তাড়া খেয়ে পালালেন এমপি আক্তারুজ্জামান

জেলা প্রতিনিধি

জুন ১, ২০২১, ০৯:৫৫ এএম


জনগণের তাড়া খেয়ে পালালেন এমপি আক্তারুজ্জামান

ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করতে গিয়ে স্থানীয় জনগণের তাড়া খেয়ে পালিয়েছেন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে লক্ষ্য করে কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতে করছিলেন স্থানীয় কয়েকশ মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ট্রলার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান। এ সময় বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা এমপিকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকে ট্রলারের দিকে। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ট্রলার নিয়ে চলে যান আক্তারুজ্জামান।

বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাঁদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার এমপি সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান।

এ সময় এমপি মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা সাধারণ মানুষের। এমপি কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

তবে এমপি মো. আক্তারুজ্জামানের দাবি, তাকে বহনকারী ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাকে (সাংসদ) দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তাদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের কাজ করতে হয়। এ কারণে এমপির ওপর তাদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।

এমপির ওপর ক্ষোভের কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি। তার আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের ওই ঠিকাদারির কাজ দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধের কাজের মান ভালো হয় না। তাই জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই ভেঙে যায় বাঁধ। আর দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।

সকাল থেকে ভাঙা বাঁধের কাছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছোট ভাই জি এম আবদুল্লাহ আল মামুন, বর্তমান নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ আরও অনেকেই। ঘটনাটি তারা প্রত্যক্ষ করেছেন। মানুষের এমন আচরণে বিস্মিত হয়েছেন তারা।

এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তারা কাজ করছিলেন, এমন সময় এমপি এসেছেন শুনেই দেখতে পান সাধারণ মানুষ কাঁদা ছুড়ে মারছে। এতে এমপির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাঁদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর মানুষ একটু শান্ত হলে এমপি আবার বাঁধের কাছে এসে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন। তবে এরপর বাঁধের কাজ আর হয়নি। এ কারণে আজ বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনা না ঘটলে বাঁধ পুরোপুরি মেরামত হয়ে যেত।

এ বিষয়ে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

বাঁধে কাজ করা কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে, ইয়াসের পর ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের নোনাপানিতে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত বুধবার ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার দীর্ঘ এক যুগ পর আবার এমন দুর্ভোগে পড়েছে। চার দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ।

[embed]<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?height=322&href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fmujib015%2Fvideos%2F855391655058782%2F&show_text=false&width=560&t=0" width="560" height="322" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowfullscreen="true" allow="autoplay; clipboard-write; encrypted-media; picture-in-picture; web-share" allowFullScreen="true"></iframe>[/embed]