Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে চন্দ্রগঞ্জে উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি

জুন ৫, ২০২১, ১২:৪০ পিএম


সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে চন্দ্রগঞ্জে উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি

৯টি ইউনিয়নে বসবাসকারী সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়নের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে এখানে একটি থানা প্রশাসন থাকলেও নেই স্বাস্থ্যসেবায় একটি সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেই একটি ফায়ার সার্ভিস, খেলাধূলার জন্য নেই কোনো স্টেডিয়াম, নেই সরকারি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ। যার ফলে এসব ইউনিয়নের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য যেতে হয় ২০ কিলোমিটার দূরে জেলার সদর হাসপাতালে এবং উচ্চ শিক্ষা অর্জনে যেতে হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২ জুন তারিখে লক্ষ্মীপুর সদর থানা থেকে পৃথক করে চন্দ্রগঞ্জ থানা নামে একটি পূর্ণাঙ্গ থানা অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা। এরপর থেকেই এখানে উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি ওঠে জোরেশোরে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই থানা এলাকার ৯টি ইউনিয়ন একসময় সন্ত্রাসের জনপদ খ্যাত হিসেবে পরিচিত ছিল। থানা হওয়ার পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সাঁড়াশি অভিযানে সন্ত্রাসের কবল থেকে সাধারণ মানুষ রেহাই পেলেও জীবন মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। অথচ, উপজেলা বাস্তবায়নের মত এখানে অনেক অবকাঠামো বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই এখানে একটি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস চলমান রয়েছে। থানা শহরে বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি অন্তত ২০টি তফসিলি ব্যাংক আছে, রয়েছে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী দুই জেলার মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ হাইওয়ে থানা, ৪টি এমপিওভূক্ত বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় (অনার্স), ব্যবসায়ীক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অন্তত ১০টি বড় বাজার রয়েছে। এসব বাজার থেকে প্রতিবছর ইজারা বাবত অন্তত ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। 

ভূক্তভোগিদের অভিযোগ, শুধু থানা প্রশাসন দিয়ে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উপজেলা হলে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, নারী উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সাধারণ মানুষের সার্বিক জীবন মান উন্নয়ন হবে। এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব দূর হবে এবং দারিদ্র বিমোচন হবে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকার কুশাখালী, চরশাহী ও বশিকপুর এই ৩টি ইউনিয়নের অবস্থান জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। এখানে বসবাসকারী নাগরিকরা বিভিন্ন ধরণের সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশু রোগীদের চিকিৎসায় যথাসময়ে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়না। যার কারণে, অনেক রোগী পথেই মৃত্যুবরণ করেন। 

অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিস না থাকায় এসব ইউনিয়নের বাজারগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে দমকল বাহিনী আসার আগেই আগুনে পুড়ে সব ছাঁই হয়ে যায়। ইতোমধ্যে, গত এপ্রিল ও মে মাসে চন্দ্রগঞ্জ বাজার ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাজারে ১০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। এতে অনেকে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শাহ আলম, সুরুজ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন তারা বলেন, চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকায় বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যসেবায় একমাত্র ভরসা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা মিললেও গর্ভবতী মায়েদের সিজার অপারেশন বা বড় কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য যেতে লক্ষ্মীপুর জেলা শহর বা নোয়াখালীর মাইজদীতে। দুই জেলার মধ্যবর্তী স্থানে চন্দ্রগঞ্জের অবস্থান হওয়ায় এখান থেকে যথাসময়ে মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়। যার কারণে, অনেক রোগী হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, চন্দ্রগঞ্জ থানা শহরে অবস্থিত প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে চন্দ্রগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে ফলাফল বিবেচনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সরকারি কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় এখানের শিক্ষার্থীরা দূরে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা অনেকসময় উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ না পাওয়ায় মাঝপথে ঝরে পড়ছে। তিনি বলেন, উপজেলা হলে অন্তত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হতো। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়ন সার্বিক উন্নয়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এম আলাউদ্দিন জানান, উপজেলা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কমিটির একটি সভা আগামী শনিবার আহ্বান করেছি। সেখানে উপজেলা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা হবে। 

তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি ও সংগ্রামের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে চন্দ্রগঞ্জে থানা দিয়েছেন। আশা করছি, বর্তমান সরকারের সময়কালে চন্দ্রগঞ্জে উপজেলার দাবিও বাস্তবায়ন হবে।        

আমারসংবাদ/কেএস