মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
জুন ১০, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম
নেত্রকোনার মদনে এক প্রতিবন্ধি তরুণী (২০) ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে দেড় লাখ টাকায় মিটমাট করে সেই টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।
অবশেষে বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই প্রতিবন্ধী তরুণী।
মদন থানা পুলিশ বুধবার ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে সম্পন্ন করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল রাতে উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের ছেলে (আন্ছু ডাক্তার) মাঘান কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নাজমুলকে ওই প্রতিবন্ধি মেয়ের সাথে অনৈতিক কাজে হাতেনাতে আটক করে স্থানীয় লোকজন। দুইদিন পর্যন্ত নাজমুলকে ওই তরুণীর বাড়িতেই আটকে রাখে স্থানীয়রা।
পরদিন বিকেলে ৯৯৯ ফোন পেয়ে মদন থানার এসআই মাসুদ জামালী ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি।
ওই রাতে স্থানীয় মাতুব্বররা বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য মাঘান গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান(হবু) এর বাড়িতে সালিশে বসেন। পরে ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর ইজ্জতের মূল্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার্য করেন তারা।
নাজমুলের পিতা রফিকুল ইসলাম জরিমানার এক লাখ ৫০ হাজার টাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাই রফিকুলের হাতে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। ওই টাকা প্রতিবন্ধী মেয়েকে না দিয়ে মাতব্বররা নিজেরাই ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় ৩ জুন ওই প্রতিবন্ধি তরুণী বাদী হয়ে নাজমুলকে আসামি করে নেত্রকোনার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, নাজমুল গভীর রাতে বসত ঘরে ঢুকে আমার সাথে জোড়পূর্বক অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাকে আটক করে। পররে দিন পর্যন্ত নাজমুলকে আমার বাড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে মাতব্বর ও পুলিশ এসে নাজমুলকে নিয়ে যায়। আমাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সালিশে বসে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু আমাকে কিছুই না দিয়ে নিজেরা (মাতব্বররা) টাকা নিয়ে চলে যায়। আমি বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি।
মদন থানার এসআই মাসুদ জামালী জানান, ওইদিন ৯৯৯ নাম্বারে ফোন পেয়ে আমি ঘটনা স্থলে গিয়েছিলাম। এ সময় ওখানে কাউকে না পেয়ে থানায় চলে আসি।
সালিশের মাতুব্বর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর ঘটনার সত্যত্যা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করেছিলাম। জরিমানার দেড় লাখ টাকা আদায় করে কুলিয়াটি গ্রামের আমার ভাগ্নে তায়েবের কাছে রেখেছে বলে আমি শুনেছি।
সালিশের আরেক মাতুব্বর রফিকুল ইসলাম জানান, জরিমানার এক লাখ ৫০ হাজার টাকা আমার ভাগ্নে কুলিয়াটি গ্রামের তায়েবের কাছে রেখেছি। কিন্তু সে ভুক্তভোগীর পরিবারকে টাকা না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছে।
মদনের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন জানান, সিএইচসিপি নাজমুলের বিষয়টি জেনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মদন থানার ওসি ফেরদৌস আলম জানান, ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য বুধবার নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।
এ বিষয়ে কুলিয়াটি গ্রামের তায়েবের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আমারসংবাদ/কেএস