Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদেশী গরুর খামার, লাখ টাকার পুঁজিতে কোটিপতি শাহ নেওয়াজ

মো. লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর)

জুন ১২, ২০২১, ০৯:৪৫ এএম


বিদেশী গরুর খামার, লাখ টাকার পুঁজিতে কোটিপতি শাহ নেওয়াজ

তিন ভাই সমন্বয়ে শখের বসে মাত্র দুটি গরু কেনার মধ্যে দিয়ে বিদেশী গরু পালন শুরু করেছিল শাহ নেওয়াজ। সেই দুটি গরু খুলে দিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। গড়ে তুলেছেন বৃহৎ দুগ্ধজাত গরুর খামার। যা থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে শত শত যুবক।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বড়গলি (মেলার বাগান) গ্রামের সফল উদ্দ্যেক্তা শাহ নেওয়াজ। গত ২০১৩ সালে দুই লাখ টাকা পুঁজিতে বাজার থেকে কিনেছিলেন বিদেশী জাতের দুটি গরু। সেই দুটি গরু থেকে ৮ বছরের মাথায় তার নিজস্ব বাড়িতে গড়ে উঠেছে ‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’।

গরুর খামার ঘুরে দেখা যায়, তিনটি পৃথক শেডে গরু রয়েছে ৭০টি। এসব গরুর লালন পালন এবং যত্নে কাজ করছে ১০ জন শ্রমিক। খামারে ঢুকেই প্রথম শেডে রয়েছে ১৬টি বকনা বাছুর। দ্বিতীয় শেডে রাখা হয়েছে বাচ্চা প্রসবে অপেক্ষমান গাভী। 

সেই শেডে বর্তমানে রয়েছে ৩টি গাভী। আগামী দুই এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব করবে এই তিনটি গাভী। তৃতীয় এবং বৃহত্তম শেডে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র দুগ্ধজাত গাভী। এসব গাভী প্রতিদিন প্রায় ২শ লিটার দুধ দেয়।

খামারে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এসব বিদেশী জাতের গরু লালন পালনে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করতে তুরস্ক থেকে অর্ধ লাখ টাকা মূল্যে কিনে আনা হয়েছে আধুনিক ‘মিলকিং’ যন্ত্র। ফলে এসব গাভী থেকে দুধ সংগ্রহ করতে বাড়তি কোন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না তাদেরকে।

এছাড়াও গো খাদ্যে হিসেবে নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে নেপিয়ার এবং সুইট লেমন জাতের ঘাস। প্রতিদিন শ্রমিকরা জমি থেকে এসব ঘাস কেটে নিয়ে আসে। এরপর আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সাইজে এসব ঘাস কেটে গরু গুলোকে খাওয়ানো হয়।

ঘাসের পাশাপাশি বাজার থেকে উন্নত মানের ফিড খাদ্য কিনে খাওয়ানো হচ্ছে। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব ফিড খাদ্যের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৭ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফিড খাদ্যের দাম বৃদ্ধি করায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে নতুন উদ্দ্যেক্তা এবং ছোট ছোট খামারের মালিকদেরকে। এমনই অভিযোগ ‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’ এর মালিক শাহ নেওয়াজের।

‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’ এর মালিক শাহ নেওয়াজের ভাই সাজ্জাদ আহম্মেদ জানান, আশপাশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি এই গরুর ফার্ম দেখতে আসে। এছাড়াও গরুর ফার্মের নামে খোলা ফেসবুক আইডির ম্যাসেঞ্জারে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন ব্যক্তি এসব গরু লালন পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি জানতে চেয়ে ম্যাসেজ করে।

তাদের খামার পরিদর্শনে এসে অনেক লোক দুগ্ধজাত গরুর খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। ইতিমধ্যে ৪ থেকে ৫ জন স্থানীয় বেকার যুবক তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদেশী জাতের গরু লালন পালন শুরু করেছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা ডেইরি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ‘নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্ম’ এর মালিক শাহ নেওয়াজ বলেন, মাত্র ২ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ২ কোটি টাকার গরু আছে। আমার পুরো প্রকল্পটি প্রায় ৩ কোটি টাকার। 

শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল যেন আমার খামারে একশ গরু থাকে। তবে খুব অল্প দিনেই আমি সফল হয়েছি। বিদেশী জাতের এসব গরু লালন পালনে শুরু থেকেই উপজেলা এবং জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় আমাকে সার্বিক সহযোগীতা এবং পরামর্শ প্রদান করে আসছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত আমার খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং গরুর বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন প্রদান করে আসছে। তবে গরুর খুরা রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে আমি খুবই ভোগান্তিতে আছি। সরকারী ভাবে এই রোগের ভ্যাকসিন এখন দেওয়া শুরু করেনি সরকার।

আবার বিভিন্ন কোম্পানী এই রোগের ভ্যাকসিন বিক্রয় করলেও, তা ঢাকা ছাড়া পাওয়া যায়না। এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে ঢাকায় যেতে হয়। দেখা যায় ভ্যাকসিনের মুল্যের চেয়ে যাতায়াতের খরচই বেশি হয়ে যায়।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমাদের উপজেলায় গরুর দুধ সংগ্রহের জন্য সিলিম সেন্টার নেই। ফলে আমি সহ উপজেলার ১১৪টি খামারের মালিককে গরুর দুধ বাজার করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও আমি খামারে আসার রাস্তাটিও চলাচলের অনুপোযোগী। এই রাস্তা দিয়ে আমাদের গ্রামের ৪০টি পরিবারের প্রায় ২ শতাধিক ব্যক্তি নিয়মিত যাতাযাত করে। পৌরসভা কতৃপক্ষ উদ্দ্যোগ নিলেই রাস্তাটি করা সম্ভব।

ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলডিডিপি) ডাঃ রাকিবা খাতুন বলেন, আমরা এই উপজেলার সকল খামারীকে নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা খামারীদেরকে প্রতিনিয়ন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

[media type="image" fid="127910" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

যাতে করে তারা দুগ্ধজাত গাভী পালনে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারে। শাহ নেওয়াজ একজন সফল খামারী। তবে ঘোড়াঘাটে সিলিম সেন্টার (দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) না থাকায় গাভীর দুধ বিপণনে খামারীরা কিছুটা সমস্যায় ভূগছেন। সিলিম সেন্টার নির্মানে আমরা উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেছি।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম বলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলার আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় সিলিম সেন্টার (দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) আছে। তবে আমাদের ঘোড়াঘাট উপজেলায় সিলিম সেন্টার নেই। সিলিম সেন্টার নির্মানে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও‘র সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করছি।

আমারসংবাদ/এআই