Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

যৌতুক দিতে না পারায় বধু সেজে যাওয়া হল না শ্বশুর বাড়ি

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

জুন ১৩, ২০২১, ০২:১০ পিএম


যৌতুক দিতে না পারায় বধু সেজে যাওয়া হল না শ্বশুর বাড়ি

ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছে প্রেমিক-প্রেমিকা। মেয়েরে পরিবার দরিদ্র হওয়ায় ছেলের ধনাঢ্য পরিবার দু’জনের ভালবেসে করা বিয়ে মেনে নেয়নি। তাই মেয়ের বাবার বাড়িতেই দীর্ঘ ৮ মাস ধরে সংসার। চলতি বছরের ২০ মে ছেলে একদিন নিজ বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠে। পরে ছেলের বাবা ও পরিবারের কথায় পালিয়ে যায় ছেলে। মারপিট, নির্যাতন করে বের করে দেয়া হয় মেয়েটিকে। উপায়ন্তর না পেয়ে ছেলের বাড়ির বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজে একদিন পড়ে থাকে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হাবিবা আক্তার সুমি। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। 

পরবর্তীতে এলাকাবাসির সালিশ বৈঠকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে ছেলের পরিবার। মেয়ের সুখের কথা ভেবে দরিদ্র পিতা মাথা গোঁজার ঠাই বসতভিটার ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে ছেলের বাবার হাতে তুলে দেয় দুই লাখ টাকা। পরে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনকে আনুষ্ঠানিক বিয়ের দাওয়াত দেয় মেয়ের বাবা। গত ১১ জুন শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। কিন্তু বাধসাধে ছেলের বাবার দাবিকৃত অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা না পাওয়ায় কণেকে নিতে আসেনি বরপক্ষের কেউ।  

ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের পানবাড়ি গ্রামে। কণ্যাদায়গ্রস্থ দরিদ্র পিতা হাবিবুর রহমানের মেয়ে হাবিবা আক্তার সুমির (২০) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে একই গ্রামের তোবারক হোসেন ওরফে নাড়িয়ার তৃতীয় ছেলে মহাসিন আলী (২৪)। গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পালিয়ে বিয়ে করে তারা। বিয়ের পর যৌতুক লোভী ছেলের পরিবার যৌতুক ৫ লাখ টাকার দাবিতে মেয়েকে মেনে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। দরিদ্র কণের পরিবার এত টাকা দিতে সমর্থ না হওয়ায় কণেকে নিয়ে যায়নি বরপক্ষ। 

বর্তমানে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন জনের নিকট বিষয়টি সমাধানের জন্য ধর্ণা দিচ্ছে মেয়ের বাবা হাবিবুর। গত শনিবার (১২ জুন) পাটগ্রাম থানায় একটি এজাহার দেয় হাবিবা আক্তার সুমির বাবা হাবিবুর রহমান। হাবিবার গায়ে হলুদ, হাতে মেহেদীর রঙ থাকলেও যৌতুকের কারণে স্বামীর বাড়িতে উঠা হচ্ছে না তার। 

হাবিবা আক্তার সুমি বলেন, ছেলের পরিবার অনেক টাকা যৌতুক দাবি করে। সালিশি বৈঠকের গন্যমান্য ব্যক্তিগণ ২ লাখ টাকা দিতে বলে। বাবা জমি বিক্রি করে টাকা দেয় তাদেরকে (বরপক্ষ)। তারা টাকা নিয়ে আমার বিয়ের জন্য কোনো শাড়ি, চুরি বা একটি নাকফুলও কিনেনি। পরে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আমার বাবা দিতে না পারায় বর মহাসিন ও তার পরিবার বিয়ের দিন আমাকে নিতে আসেনি। এ অবস্থায় আমার জীবন নিয়ে বেঁচে না থাকায় ভাল। 

কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, আমরা খুব চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোবারক হোসেন খুব ত্যারা লোক। পরবর্তীতে যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েটি ঘরে তুলেনি।  

বরের পিতা তোবারক হোসেন বলেন, মেয়েকে আনতে ৪ জনকে পাঠাইছিলাম। আমি আনতে যাব না। বাড়িতে উঠাবো না। টাকা পয়সার কোনো ঘটনা নাই। 

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। বরপক্ষ বর্তমানে মেয়েকে নিবে বলে আমাদেকে জানিয়েছেন।

আমারসংবাদ/কেএস