Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪,

৮ দিন কোথায় ছিলেন ত্ব-হা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৮, ২০২১, ১২:৩৫ পিএম


৮ দিন কোথায় ছিলেন ত্ব-হা?

নিখোঁজ নয়, আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান গত ৮ দিন যাবৎ ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি রংপুরের বাসায় ফিরে এলেও গত ৮ দিন তিনি কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রশিদ বলেন, গত ৮ দিন ত্ব-হা কোথায় ছিলেন সে ব্যাপারে আমরা তার কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চিন্তাভাবনা করছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আদনানের মা মাজেদা বেগমের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরেই তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে তার সর্বশেষ অবস্থান কোথায় ছিল, কোন কোন জায়গায় তিনি অবস্থান করেছেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ত্ব-হা নিখোঁজের ঘটনায় দুটি জিডি হয়েছিল। তার মা একটি জিডি করেন এবং তার সঙ্গে নিখোঁজ থাকা আমিরুদ্দিনের ভাই ফয়সাল আরেকটি জিডি করেন। এরপর থেকে পুলিশ তাদের খোঁজে মাঠে নামে। বিভিন্ন উপায়ে তদন্ত চলছিল। আজ আমরা গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, ত্ব-হা তার প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে আছেন। সেখান থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

আবু মারুফ হোসেন জানান, গত ১০ জুন বৃহস্পতিবার রংপুুুর থেকে প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঢাকার পথে রওনা হন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ আব্দুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন। পরে তারা ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছালে ত্ব-হার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সেখান থেকে গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে চলে যান। সেখানে তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু সিয়ামের অবস্থান বাড়িতে অবস্থান করেন। এ সময় ত্ব-হার সঙ্গে আব্দুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনও ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, ওই বাড়িতে অবস্থানকালে ত্ব-হার ইচ্ছাতেই সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। কিছুদিন এভাবে আত্নগোপনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণেই ত্ব-হার কথায় রাজি হয়ে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মারুফ হোসেন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় তার সফরসঙ্গীদের ত্ব-হা তার সফরসঙ্গীদের তার সমস্যা ব্যক্তিগত সমস্যার কথা খুলে বলেন। এরপর তারা পরামর্শ করে আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাদের এই আত্মগোপনে থাকার দাবি, রাষ্ট্র বা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার কোনো ষড়যন্ত্র কি-না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবু ত্ব-হা ও আমির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা প্রাথমিকভাবে আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। বাকি দুজনের মধ্যে আব্দুল মুহিতকে মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট থেকে এবং ফিরোজ আলমকে বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানানো হয়।

ত্ব-হার উদ্ধৃতি দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ত্ব-হা আমাদেরকে তার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছে। আমরা তার কথাগুলো যাচাই-বাছাই করছি। আমরা তাকে রাতে রংপুর কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করব। এই মুহূর্তে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে মুখে আনতে চাই না। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, শুক্রবার দুপুর ২টায় আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের পরিবার থেকে জানানো হয়, তিনি বাড়ি ফিরেছেন। এরপর দুপুর পৌনে ৩টার দিকে নগরীর বাবুখা মাস্টারপাড়া এলাকার আজহারুল ইসলাম মণ্ডলের বাড়ি থেকে ত্ব-হাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোতয়ালী থানায় নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ডিবি কার্যালয়ে তাকে নেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও তাদের স্ব-স্ব বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদে জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

গত ১০ জুন থেকে চার সহযোগীসহ নিখোঁজ হন ত্ব-হা। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে ওই তিনজনসহ আবু ত্ব-হা রংপুর থেকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে ঢাকার পথে রওনা দেন। রাতে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হলে তিনি সাভারে যাচ্ছেন বলে তার মাকে জানান।

এরপর রাত ২টা ৩৬ মিনিটে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আদনানের। তিনি সাভার যাচ্ছেন বলেই জানান স্ত্রীকেও। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পরে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে তাকে না পেয়ে ১১ জুন বিকেলে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন ত্ব-হার মা আজেদা বেগম।

কোথা থেকে কীভাবে ত্ব-হা নিখোঁজ হন, এমন তথ্য দিতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। অনেকে অভিযোগ তুলছিল, সমসাময়িক অন্যান্য ইস্যুতে আন্তরিকতা দেখালেও ত্ব-হার নিখোঁজের বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না সরকার। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল।

সপ্তাহখানেক নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার সন্ধান মিলে রংপুরের এই আলোচিত বক্তার। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবু ত্ব-হাকে তার শ্বশুর আজহারুল ইসলাম মন্ডলের বাড়িতে ঢুকতে দেখেন তার প্রতিবেশীরা।

পরে বেলা পৌনে ৩টার দিকে তাকে রংপুর নগরীর কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

খোকন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি নগরীর মাস্টারপাড়ায় আবু ত্ব-হাকে দেখেন। কিন্তু ত্ব-হা সে সময় কোনো কথা বলেননি। মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন তিনি।

রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, বিকেল ৩টার দিকে তাকে রংপুুুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টার পাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে থানা থেকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া অন্য তিনজনকেও নিজ নিজ বাড়ি থেকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। 

প্রসঙ্গত, আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রকৃত নাম আফছানুল আদনান। বয়স ৩১। তার মা আজেদা বেগম। বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। ছোট বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম। আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুর, তাদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে-সন্তান রয়েছে।

বাবা মারা যাওয়ার পর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে নানার বাড়িতে বড় হন আদনান। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নগরীর নিউ শালবন এলাকায় বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে আদনান আরেকটি বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষক।

আদনান প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কোরআন শিক্ষার জন্য কিছুদিন স্থানীয় একটি মাদরাসায় তালিম নেন। এ সময় তিনি আহলে হাদিস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও লাইফ ফাউন্ডেশন, আলোর পথ এবং একাডেমিক কোরআন স্টাডিজ নামে সংগঠনে জড়িত রয়েছেন। ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

আমারসংবাদ/জেআই