Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ইউপি নির্বাচন: উজিরপুরে জল্লায় অস্ত্রধারীদের আনাগোনায় শঙ্কিত ভোটাররা

বরিশাল প্রতিনিধি

জুন ১৯, ২০২১, ১০:০০ এএম


ইউপি নির্বাচন: উজিরপুরে জল্লায় অস্ত্রধারীদের আনাগোনায় শঙ্কিত ভোটাররা

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত জল্লা ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে বাড়ছে উৎকন্ঠা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দু অধ্যুষিত ওই ইউপিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা বাহিনীর সদস্যরা। 

তারা এলাকায় নিয়মিত সশস্ত্র মহরা দিয়ে ও রাঁতের আধারে বোমা ফাটিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে। শেষ মুহূর্তে এসে এই ইউপির হেভিওয়েট দুই নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করছেন। 

সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, হামলা ও ভোটারদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈ। তিনি জল্লা ইউপির কুড়লিয়া বাজারে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সাবেক সহ-সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) নৌকার প্রার্থী বেবী রানী হালদার আমার নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে এসে গণসংযোগের নামে ভোটারদের হুমকি-ধামকি দিয়েছে। 

এছাড়া ওই দিনই তার সমর্থকরা আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। তারা ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে যাতে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না যায়। আমার লোকজনদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। আমি আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

উর্মিলা বাড়ৈ আরও বলেন, আমার স্বামী অবনী ভূষণ বাড়ৈ এই ইউনিয়নের সাবেক সফল চেয়ারম্যান ছিলেন। সন্ত্রাসীরা ২০০৪ সালে তাকে হত্যা করে। এরপর জণগনের স্বার্থে আমি উপ-নির্বাচন করেছি। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবা করেছি, নৌকার প্রার্থীর মত দুর্নীতি করিনি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমার জয় হবেই। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈর ছেলে অচিন্ত বাড়ৈ, সমর্থক নিরোধ জয়ধর, সুব্রত বৈদ্য জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দু অধ্যুষিত ওই ইউপির বিভিন্ন গ্রামে বহিরাগত অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রায় রাতেই কাঠালবাড়ি, বিলগাববাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটানোর খবর পাওয়া যায়। 

নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি ও চাইনিজ কুঠার নিয়ে দিনে-রাতে সমান হারে এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থীর বিভিন্ন সভায় প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন ভোটের দিন তাদের কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এনিয়ে ভোটের দিনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত ভোটাররা। 

স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী পুতুল জয়ধর ও রিতা জয়ধর অভিযোগ করে জানান, দুর্নীতিবাজ বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী বেবী রানী হালদারের শ্বশুড়ের লাইসেন্সকৃত শর্টগান নিয়ে ভাসুর ছেলে অলোক হালদার নির্বাচনের শুরু থেকেই বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। 

ইতোমধ্যে কয়েকজনকে মারধরও করেছেন। এসব নিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও তারা কোনো গুরুত্ব দেননি। বরং উল্টো হামলার শিকার ও অভিযোগকারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন। 

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেবী রানী হালদার জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী যিনি এমন অভিযোগ করেছেন, তিনি তো দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন। তাই তিনি নানান কিছু বলছেন। তবে তার কোন অভিযোগ সত্য নয়, হামলার কোন ঘটনা আমার জানা নেই। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ যেমন বজায় রয়েছে তেমনি শেষ পর্যন্ত তা থাকবে বলে জানান তিনি। 

অপরদিকে ওই ইউপির একাধিক ভোটাররা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ হলে আনারস মার্কা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। ফলে নৌকার প্রার্থী বেবী রানী হালদারের ভাড়াটিয়া লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈর কর্মীদের মাঠেই দাঁড়াতে দিতে চাইছেন না। 

এককালের সর্বহারা অধ্যুষিত জনপদ বলে খ্যাত উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই অশান্ত হয়ে উঠেছে এখানকার প্রতিটি জনপদ। তাছাড়া গত কয়েকদিন থেকে মধ্যরাতে ইউপির বিভিন্ন গ্রামে বোমার শব্দে সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

এসব বিষয়ে রির্টানিং ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলিমুদ্দিন জানান, আগামী ২১ জুন ভোট সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তার জন্য নির্বাচনী মাঠে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। তাছাড়া ভোটেরদিন প্রত্যেক এলাকায় পূর্বের তুলনায় বেশি সংখ্যক নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। 

বহিরাগতদের অস্ত্রের মহড়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আমারসংবাদ/এআই