Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

হাড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন, শত কোটি টাকারও বেশি বিক্রির আশা

রংপুর প্রতিনিধি

জুন ২০, ২০২১, ০১:১৫ পিএম


হাড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন, শত কোটি টাকারও বেশি বিক্রির আশা

বাগনের প্রায় প্রত্যেক গাছে গাছে হালকা লাল হলুদের আভা ছড়াচ্ছে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম বাগানগুলোতে। রোববার থেকে বাজারে উঠা শুরু হয়েছে জনপ্রিয় এই হাড়িভাঙা আম। এরই মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের হাঁটও বসার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। 

তবে এবার আম চাষীদের আম রংপুর নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং চালু করা হবে ‘সদয়’ নামে একটি হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির অ্যাপস। বিগত বছরগুলোর মত এবারও হাঁড়িভাঙার ফলন নিয়ে আশাবাদী আম চাষীরা। 

তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তড়িঘড়ি করে আম বিক্রি করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা। সব ঠিক থাকলে এ বছর প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি আম বিক্রি হবে রংপুর থেকে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আম চাষীরা।  

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ছয় হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙাসহ অন্যান্য আম বাগান রয়েছে। এতে গাছের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখ ৫৭ হাজার। এরমধ্যে শুধুমাত্র রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙা আমের জমি রয়েছে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর। 

এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন। চলতি বছরে মিঠাপুকুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি এক হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে এই আমের দাম কিছুটা কম থাকলে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৬০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সময়ের আগে বাজারে তুললেও হাঁড়িভাঙা আম মুলত জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে গাছ থেকে পাড়ার উপযুক্ত সময়। এসময় আমের স্বাদসহ গুনগত মান ঠিক থাকে। চলতি বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ ২০জুন হাঁড়িভাঙা আম বাজারে তোলার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষে গত ৭জুন মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিনি বলেন, '২০ জুন থেকে কৃষকের আম রংপুর নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। ওইদিনই ‘সদয়’ অ্যাপস নামে একটি হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির অ্যাপস চালু করা হবে। মতবিনিময় সভায় আম পরিবহনের জন্য বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালুসহ পরিবহন সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানান চাষিরা।

তারা জানান, রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের বিশাল বাজার তৈরি হলেও আম বিক্রির জন্য কোনো ধরণের শেড নেই। কাঁদামাটি মারিয়ে আম বিক্রি করতে গিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদেও দুর্ভোগে পড়তে হয় । এছাড়া ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণ, আমের বৃহৎ হাট পদাগঞ্জহাটের রাস্তাঘাটের সংস্কার ও হাটে ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। এসময় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানান যায়, আম গাছে ভরে গেছে বসত-ভিটা, কৃষি জমি, পুকুর ও নদী পারে। বিস্তৃণ এলাকায় বাতাসে ছড়াচ্ছে যেন মিষ্টতার গন্ধ। হাঁড়িভাঙার জন্মভূমি বলে পরিচিত রংপুরের মিঠাপুকুরসহ পাশর্^বর্তী এলাকাগুলোতে আম পারাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে আম চাষিরা, ব্যবসায়ীসহ হাঁড়িভাঙাকে ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বেকারদের  মাঝে। ‘মধু মাসে মধু মন, জমে ওঠে মধু ক্ষণ’ যেন এমন আনন্দে ভাসছে তারা।

ধান-পাটসহ অন্য চাষাবাদের পরির্বতে মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জে হাঁড়িভাঙা এখন কৃষকের প্রধান ফসলে রূপান্তরিত হয়েছে। বদরগঞ্জের কুতুবপুর, লোহানীপাড়া, শ্যামপুর ও ওসমানপুরের মাওলানা হাঃ আওলাদ হোসেন, শফিকুল মিয়া, শাহআলম ও জলিল মিয়া একসময় এখানকার লালচে মাটিতে ধান, পাট গম ও ভূট্টা চাষ করতেন। 

গতানুগতিক চাষ পদ্ধতিতে ভাগ্যে তেমনভাবে পরিবর্তন হত না তাদের। কৃষিকে ভর করে কোনরকম কষ্টে দিন পার করতেন। মধ্যবিত্ত গৃহস্তের অবস্থা দিন দিন নিচে নামছিল। কিন্তু গত এক দশকেই দিন বদলের হাওয়া লেগেছে এসব গ্রামে। হাঁড়িভাঙা আম চাষের সাফল্য ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক। প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত কৃষকের বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ধানী জমির আইলেও লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙার চারা। চারা লাগানোর তিন বছরেই পাওয়া যায় আমের ফলন।

তারা আরও জানান, মৌসুমের শুরুতেই বাগান নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন ব্যবসায়ীরা। বাগানে শুধু গাছ থাকলেই আর চিন্তা করতে হয়না তাদের। ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এই ব্যবসায় ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শহর থেকে বাগানের দূরত্ব বেশি আর সহজ পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় দ্বিগুন দামে আম পরিবহণ করতে হয় তাদের। আম সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শুরুতে আমের দামে বিপর্যয় দেখা দেয়। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয় এই আম। তবে মৌসুম শেষে আম যখন কমতে থাকে তখন হু-হু করে বেড়ে যায় হাঁড়িভাঙার দাম। মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে প্রতিমণ আম বিক্রি হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায়।

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম জানান, মৌসুমের শুরুতে কিছুটা বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পুরাতন গাছে মুকুল কম ধরলেও হাঁড়িভাঙার ফলনে তেমন বিপর্যয় ঘটেনি। এবারে উৎপাদিত হাঁড়িভাঙা আম শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

আম সংরক্ষণ সর্ম্পকে এই কৃষিবিদ বলেন, আধুনিকমানের বিশেষায়িত হিমাগারের মাধ্যমে রংপুরের হাড়িভাঙা আম সংরক্ষণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে পুষ্ট কাচা আম সংরক্ষণ করতে হবে।

আমারসংবাদ/এআই