Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

২০ বছর পর পরিবার খুঁজে পেল ভূঞাপুরের শাহনাজ

জুন ২৩, ২০২১, ১০:১০ এএম


২০ বছর পর পরিবার খুঁজে পেল ভূঞাপুরের শাহনাজ

শিরোনাম পড়ে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যিই। এটা কোন গল্প বা সিনেমার কাহিনী নয়। এমন ঘটনা যে বাস্তবেও ঘটতে পারে ভূঞাপুরের শাহানাজ তার জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। পাঁচ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেই শাহনাজ ২০ বছর পর ফিরে পেয়েছেন মা-বাবা ও তার পরিবার। 

শুধু একাই ফেরেননি, সঙ্গে নিয়ে ফিরেছে তার স্বামী-সন্তান। এতিম শাহনাজ ফিরে পেলেন মা-বাবার আসল পরিচয়। তবে গর্ভধারিনী মা কাছে থাকলে আনন্দটা আরো বেশি হতো। ঘরে সৎ মাকে ফিরে পেলেও ফিরে পাননি গর্ভধারিনীকে। সিনেমার মতো গল্প কাহিনী নয়, বাস্তব এই ঘটনাটি ঘটেছে শাহনাজের জীবনে।

শাহনাজের বয়স যখন আড়াই বছর তখন তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তী আড়াই বছর কাটে তার বড় চাচ চাচীর কাছে। পাঁচ বছর পরেই তাকে অন্যের কাছে লালন পালনের জন্য দেন তার পরিবার। কিন্তু যে পরিবারে তাকে দেওয়া হয় সেখানেও বেশি দিন থাকতে পারেননি শাহনাজ। 

বাসার মালিকের মেয়ের দুর্ব্যবহারের কারণে পাঁচ বছর বয়সে সেখান থেকে চলে যান় অন্য বাসায়়। সেখানেই অতিবাহিত করেন তার বাকি জীবন। কিছুদিন আগে জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক আর,জে কিবরিয়ার 'আপন ঠিকানা' নামের একটি অনুষ্ঠানে শাহনাজকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রচার করা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে গত বছর তার চাচাতো ভাই মোঃ রায়হান তার ফেসবুক আইডি থেকে শাহনাজের সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। রায়হানের স্ট্যাটাসটি চোখে পড়ে এস,কে আবদুল্লাহর। শাহনাজের ভিডিওটি রায়হানের ফেসবুক মেসেঞ্জারে শেয়ার করেন। 

রায়হান ওই ভিডিওটি তার বাড়ির সবাইকে দেখান এবং ভিডিওটি তাদের হারিয়ে যাওয়া শাহনাজের সাথে মিলে যায়। পরে পরিবারের বর্ণনায় শাহনাজের মাথার চুল, কানে সমস্যা এবং শাহনাজের অন্যান্য বর্ণনা শুনে পরিবারের সবাই নিশ্চিত হন এই মেয়েটিই হারিয়ে যাওয়া তাদের শাহনাজ।

পরে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ফিরে পান তাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে। গত ১৯ জুন শাহনাজ তার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ভূঞাপুরের জিগাতলা গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। হারিয়ে যাওয়া শাহনাজকে পেয়ে খুশি তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। তাকে এক নজর দেখতে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আশে পাশের এলাকার প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন। শাহনাজ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের আবু সাঈদের মেয়ে এবং তোজাম্মেল হকের ভাতিজি। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে পাঁচ বছর বয়সে হারিয়ে যান শাহনাজ। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পায়নি তার পরিবার। শাহনাজ নিজের নাম ছাড়া বাবা-মা ও গ্রামের নাম কিছুই মনে করতে পারেনি। শাহনাজকে অন্যের বাসায় কাজে দেওয়ার পর তার চাচা মাঝে মধ্যে যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে তার চাচার নাম বলতে না পারলেও কিছুটা বর্ণনা দিতে পারতেন শাহনাজ।

শাহনাজের চাচাতো ভাই মোঃ রায়হান জানান, ৫ বছর বয়সে হারিয়ে যায় শাহনাজ। আমার বাবা সহ পুরো পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি। ওর জন্য অনেক কান্নাকাটি করতো সবাই। এখনো শাহনাজের ব্যবহৃত জামাকাপড়, জিনিসপত্র আমার মা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। আমার মায়ের এমন অবস্থা দেখে গত বছর আমার ফেসবুক আইডিতে শাহনাজের বর্ণনা দিয়ে তার সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেই‌। আমার স্ট্যাটাস দেখে এলাকার বড় ভাই এস,কে আবদুল্লাহ (জুয়েল) বিদেশ থেকেই একটি ভিডিও আমার ইনবক্সে দেন‌। ভিডিওটি দেখে আমরা নিশ্চিত হই যে, ওই মেয়েটিই আমাদের বোন শাহনাজ। আমরা আমাদের বোনকে পেয়ে খুব খুশি।

তিনি আরো বলেন, আর,জে কিবরিয়া ভাই সহ তার পুরো টিমকে ও এস,কে আব্দুল্লাহ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ। কারণ, তাদের প্রচেষ্টায় ও অনুপ্রেরণায় আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া বোনকে ফিরে পেয়েছি।

শাহনাজ বলেন, মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর একটি পরিবারের কাছে আমাকে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আমি হারিয়ে যাই। এরপর ঢাকার খিলগাঁও বাসাবোর কদমতলা এলাকার মাশুক আহমেদ আমাকে পেয়ে তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানেই বড় হই এবং বিয়ে করি। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে আমার খুব খারাপ লাগত। তবে আমার শশুর বাড়ির মানুষগুলো খুব ভালো। সব কিছু জেনেই আমার স্বামী আমাকে বিয়ে করেছেন।

তিনি আরো বলেন, চাচার চেহারার বিবরণ ও কিছু আবছা আবছা স্মৃতি ছাড়া ছোট বেলার কোনো কিছুই মনে ছিলনা তার। তবে চাচাকে প্রথম দেখাতেই তিনি চিনতে পেরেছেন। যদিও বাবা ও আত্নীয়-স্বজনদের চিনতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমার পরিবারকে ফিরে পেয়ে সেই কষ্ট দূর হয়েছে। এতে আমার স্বামীও খুব খুশি হয়েছেন।

শাহনাজের চাচা তোজাম্মেল হক বলেন, ৫ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পাবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। মেয়েকে যারা মানুষ করছেন এবং বিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করি মহান আল্লাহ তাদেরকে যেন মঙ্গল করেন। আমরা আমাদের মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি। শাহনাজও আমাদেরকে পেয়ে অনেক খুশি।

আমারসংবাদ/এআই