Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

দিনাজপুরে ভূয়া সার্টিফিকেটধারী সাংবাদিকের ছড়াছড়ি

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

জুন ২৪, ২০২১, ০৯:১৫ এএম


দিনাজপুরে ভূয়া সার্টিফিকেটধারী সাংবাদিকের ছড়াছড়ি

সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার ঐতিহ্যবাহী দিনাজপুর জেলা এখন ভূয়া সার্টিফিকেটধারী সাংবাদিকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনের সূর্য উদয়ের মতো দিনাজপুরের নিত্য নতুন সাংবাদিকের জন্ম হয়। চোরাচালানের লাইনম্যান, ভূয়া ম্যাজিষ্ট্রেট, ছিছকে চোর থেকে শুরু করে, সুপারি ব্যবসায়ী, ভেজাল ব্যবসায়ী, হকার, প্রেসক্লাবের ঝাড়ুদারও এখন সাংবাদিক। এ সকল সাংবাদিকের চাঁদাবাজীর অত্যাচারের অতিষ্ট দিনাজপুরবাসী। তেমনি ফুলবাড়ী সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা একই অবস্থা বিরাজ করছে।

দিনাজপুরের বিভিন্ন সাংবাদিক নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, এই জেলায় সাংবাদিকতা এখন বড় ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। গলায় কোন মতে একটা সাংবাদিকের কার্ড ঝুলাতে পারলেই পকেট গরম। তাই এসব লাইনম্যান, সুপারি ব্যবসায়ী, ঝাড়ুদার, হকার পত্রিকার কার্ড সংগ্রহ করতে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে ভূয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে। প্রতিটি প্রত্রিকা অফিস তাদের সাংবাদিকদের দেওয়া সার্টিফিকেটগুলো যাচাই করলে সকলের মুখোশ উন্মোচন হবে। 

একজন সাংবাদিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, এই তো কয়েকদিন আগে আমার পত্রিকা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতো দিনাজপুরের বাহির থেকে আসা যে ছেলেটি সে না কি এখন একটি জাতীয় ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক। তার এখন সময় কাটে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির রেস্ট হাউজে। সম্প্রতি দিনাজপুরের একজন ঢাকার কয়েকটি জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকার প্রতিনিধি হয়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সে এসএসসি পাস হলেও পত্রিকা অফিসে ডিগ্রী পাসের ভূয়া সার্টিফিকেট জমা দিয়ে প্রতিনিধি হয়েছন। পাঁচবিবির একজন সুপারি ব্যবসায়ী এসএসসি পাস না হলেও ডিগ্রী পাসের ভূয়া সার্টিটিফিকেট জমা দিয়ে ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হয়ে আছেন। 

ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুরের স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ করে জানান, এই দুই উপজেলায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এবং মধ্যপাড়া পাথরখনি। এ দুই উপজেলাতেই পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ সাংবাদিক রয়েছেন। অথচ চাঁদাবাজীর ধান্দায় নামধারী কিছু সাংবাদিক এই দুই খনিতে ধান্দাবাজীর জন্য সারাদিন তীর্থের কাকের মতো পড়ে থাকে। 

দিনাজপুরের কিছু সাংবাদিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পেশাদার সাংবাদিক জানান, যারা কিছুদিন আগে আমাদের ক্যামেরাম্যান, কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেছিলো তারা আজ নাকি বিভিন্ন টিভির, পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। এসব নব্য ভূয়া সাংবাদিকদের চাঁদাবাজীর অত্যাচারের অতিষ্ট দিনাজপুরবাসী। যাদের একসময় দু’বেলা  দু’মুঠো ভাত জুটতোনা তারা আজ গাড়ি বাড়ির মালিক। অনেকেই বিভিন্ন পত্রিকার কার্ড সংগ্রহ করেছেন শুধুমাত্র সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাদক সেবনের জন্য। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিমাসে আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন মিটিং এ অংশ নিতে জেলায় যেতে হয়। কিন্তু মিটিং শেষ হবার পর বাহিরে বের হবার সাথে সাথে ফকিররা যে রকম ঘিরে ধরে ভিক্ষা চায় ঠিক তেমনি কিছু নামধারী সাংবাদিক চারদিক থেকে ঘিরে ধরে টাকা দাবি করে।  

কিছু পেশাদার কয়েকজন সাংবাদিকের অভিযোগ, বিভিন্ন সংগঠনের চেয়ার দখল করতে, এমপি নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ধান্দা করতে কিছু অপসাংবাদিক এসব ভূয়া সাংবাদিকদের তৈরী করছে। এদের কারণে দিনাজপুরে পেশাদার সাংবাদিকদের মুখ দেখায় দায় হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকতা পেশাকে এখানে এখন সবায় ঘৃণার চোখে দেখে। 

আমারসংবাদ/কেএস