Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কলারোয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ'র সংবাদ সম্মেলন

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

জুন ২৪, ২০২১, ১০:৪০ এএম


কলারোয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ'র সংবাদ সম্মেলন

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ এর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সুপেয় পানি, হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে, স্যানিটেশন খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, বিভিন্ন জলাধার দূষণমুক্তভাবে সংরক্ষণের দাবী জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন)  বেলা ১০টায় উত্তরণ কলারোয়া প্রজেক্ট অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উত্তরণ এর ওয়াশ বিষয়ক প্রেগ্রাম ম্যানেজার হেদায়েতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূলীয় সাতক্ষীরা দুর্যোগপ্রবণ অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা। এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সুপেয় পানির সংকট। এ এলাকার অধিকাংশ অধিবাসী এ সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের দুর্যোগ ও জলাবদ্ধতার সময় এ এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এ এলাকার অধিকাংশ স্থানে ভূ-গর্ভে প্রায় ১২০০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর বা জলাধার পাওয়া যায় না। 

যদিও কোন জায়গায় জলাধার বা পানির স্তর (একুইফার) পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় ঐসব জলাধারের অধিকাংশ আয়রণ আর্সেনিক যুক্ত অথবা নোনা পানি। পানীয় জলের সংকট নিরসনে এই পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বড় ধরণের কোনো গবেষণা বা হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে করা হয়নি। সেকারণে এ অঞ্চলে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য সরকারীভাবে লাগসই কোনো প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তার প্রচলন ঘটেনি। 

উত্তরণ পরিচালিত 'Ground Water Arsenic Calamity' নামক গবেষণা রিপোর্ট এর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৭৯ শতাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। চিংড়ী চাষ সম্প্রসারণের ফলে লবণাক্ততার কারণে পুকুরগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততার মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে। 

এই সংকটের সুযোগ নিয়ে অসংখ্য ব্যবসায়ী খাবার পানি বিক্রির সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি (R.O Reverse Osmosis) অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ সম্মত নয়। এই প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত পানিতে বিভিন্ন খনিজ লবনের ঘাটতি রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, ভূ-প্রকৃতি ও পরিবেশ বিরোধী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধ সমস্যা এ এলাকার একটি নিয়মিত ঘটনা। এ কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ল্যাট্রিনগুলো একেবারে ভেঙে পড়ে যা প্রতিবছর মেরামত অথবা নতুন করে নির্মাণ করতে হয়। এ দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী, দরিদ্র, হতদরিদ্র, দলিত শ্রেণী ও নারী প্রধান পরিবারগুলো চরম ভোগান্তি ও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। 

সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে দারিদ্র্যের হার ২১.৬ শতাংশ সেখানে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী কেবলমাত্র সাতক্ষীরা জেলায় দারিদ্র্যের হার ৪৬ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলাকায় সুপেয় পানি ও ল্যাট্রিনের সরবরাহ সহজলভ্য করা হলে এলাকায় দারিদ্র জনসাধারণের জন্য যেমন সহায়ক হবে তেমনি তা পরিবেশ উন্নয়নেও বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে। 

এ সকল প্রেক্ষাপটে তিনি এলাকাবাসীর কয়েকটি দাবী তুলে ধরেন, তার মধ্যে রয়েছে- ভূ-গর্ভস্থ জলাধারের অবস্থা কোথায় কেমন সে বিষয়ে ব্যাপক ভিত্তিক একটি হাইড্রোলজিক্যাল অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করা। দরিদ্র, হত দরিদ্র, দলিত শ্রেণী, প্রতিবন্ধী ও নারী প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পানি ও পয়:নিষ্কাশন খাতে বিশেষ অর্থ বরাদ্দ রাখা। সুপেয় পানির জন্য যেহেতু এ অঞ্চলের প্রচলিত প্রযুক্তি উপযোগী নয়। 

সেজন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এলাকার দীঘি, পুকুর, খালসহ সকল ধরণের পানির আধারগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নতুন নতুন দীঘি, পুকুর প্রভৃতি খনন করা।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,-উত্তরণ এর কলারোয়া ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শেখ রিয়াজুল ইসলাম, প্রতিনিধি গাজী জাহিদুর রহমান, ফিল্ড অফিসার রাহুল দে সহ কলারোয়া রিপোর্টার্স ক্লাব ও প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ। 

আমারসংবাদ/এআই