Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

লালমোহন হাসপাতালে আসলেই শুরু হয় ভোগান্তি

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি

জুলাই ৪, ২০২১, ১১:০০ এএম


লালমোহন হাসপাতালে আসলেই শুরু হয় ভোগান্তি

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনেশিয়ান আর বিশেষজ্ঞের অভাবে সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে প্যাথলজি সবখানেই এখন ময়লার স্তুপ। নষ্ট হয়ে গেছে এক্স-রে মেশিন। আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি মেশিন থাকলেও কিছুই হয়না এখানে। সামান্য রক্তের পরীক্ষার জন্য রোগীদের ভরসা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সমস্যা যান্ত্রিক, টেকনিশিয়ানের। রোগীরা হাসপাতালে আসলেই শুরু হয় নাগরিক ভোগান্তি দিয়ে। নামমাত্র কয়েকটি ঔষধ পাওয়া গেলেও আর কোন চিকিৎসা সেবাই নেই লালমোহন উপজেলার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

অসুখ বলে-কয়ে আসে না। হঠাৎ যদি কারো হৃদরোগ দেখা দেয় তাকে নিয়ে স্বজনদের দৌড়াতে হয় জেলা হাসপাতালে। তাও দেড় ঘন্টা সময় লাগে। তৎক্ষণাত বহু হৃদরোগীর মৃত্যু ঘটে। এছাড়া হাড় ভাঙ্গা থেকে শুরু করে গাইনি সমস্যার জন্যও রোগীদের ছুটতে হয় জেলা হাসপাতালে।

সরেজমিনে জানা গেছে, লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। ২০১২ সালের ৯ মে এখানে ৫০ শয্যার এই হাসপাতাল ও অপারেশন থিয়েটার উদ্বোধন করেন ভোলা-৩ আসনের এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার উদ্বোধন হলেও এনেসথেসিয়া ও গাইনি ডাক্তার না দেওয়ায় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অন্য উপজেলা থেকে ডেপুটেশনে ডাক্তার এনে কিছুদিন অপারেশন চালু রাখা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে ২০৮ টি অপারেশন করা হয়েছে বলে জানান নার্সিং সুপারভাইজার দীপালি দে। তারা চলে গেলে এর পর গত ৫ বছর ধরে আর অপারেশন থিয়েটারের দরজা খোলা হয়নি। বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরেও ময়লা জমে গেছে। মেঝেতে জমেছে বৃষ্টির পানি।

হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান রিয়াজ নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর বিভাগীয় গ্রাজুয়েশন কোর্স পড়তে ছুটি নিয়ে চলে যান। এ ৫ বছর প্যাথলজির দরজাও বন্ধ ছিল। করোনা ভাইরের কারণে কিছুদিন আগে তাকে পূণরায় আনা হয়েছে। কিন্তু প্যাথলজিতে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মেডিসিন না থাকায় সেখানে কোন কাজই হচ্ছে না। প্যাথলজির ভিতরে ডুকলে মনে হয় যেন কোন ডাস্টবিন। সরঞ্জামগুলো এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছ। টেবিল চেয়ারে ময়লার স্তুপ। বাক্সবন্ধি হয়ে আছে ৩০০ এমএম এক্স-রে মেশিন।  

বিভিন্ন রোগীর লোকজন জানায়, হাসপাতালে পরীক্ষার নিরিক্ষার সুযোগ না থাকার ফলে রোগীদের বাইরে যেতে হয়। আর এসব সুযোগ নিয়ে হাসপাতাল চত্ত্বরেই দালালদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর খপ্পরে পড়ছে রোগীর লোকজন। 

রোগীর স্বজন ইউসুফ আহমেদ জনান, লালমোহন হাসপাতালে কোন পরীক্ষাই করা হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের বাইরেরর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ঔষধের ব্যবস্থা থাকলেও সাধারণ রোগীরা ঔষধ পাচ্ছে না। বেশিরভাগ দামী ঔষধ বাইরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হয়।

প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান রিয়াজ বলেন, প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। তবে প্যাথলজিতে মেডিসিন নেই। যার কারণে কোন পরীক্ষা নিরিক্ষা করা যাচ্ছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের সমস্যার সমাধান এবং জনবল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে। প্যাথলজির জন্য এ অর্থবছরে ২ লাখ ১২ হাজার ২৮ টাকার মেডিসিন বরাদ্দ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তা চলে আসবে।

আমারসংবাদ/কেএস