Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মেডিকেল রিপোর্টে মেলেনি নির্যাতনের সত্যতা, বেড়েছে তদন্ত কমিটির মেয়াদ

জহির খান, বরিশাল

জুলাই ৮, ২০২১, ১২:১০ পিএম


মেডিকেল রিপোর্টে মেলেনি নির্যাতনের সত্যতা, বেড়েছে তদন্ত কমিটির মেয়াদ

বরিশালের উজিরপুরে হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে (নারী) শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের সময়সীমা আরো ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। ওই নারীর সঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্যরা যাতে কথা বলতে পারেন সে জন্য বুধবার আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এজন্য তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে আরও সাত দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান জানান, অভিযোগ তদন্তের জন্য কারাবন্দি ওই নারীর (ভিকটিম) বক্তব্য গ্রহণ করতে তদন্ত কমিটির কথা বলা প্রয়োজন। তাই তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  

এর আগে অভিযোগ তদন্তে গত রোববার (৪ জুলাই) রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার কাজী মো. সোয়াইব আহমেদকে প্রধান ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেনকে সদস্য করে ২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান। ওই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।

এদিকে আদালতের নির্দেশানুযায়ী নির্যাতনের অভিযোগকারী ওই নারী আসামির মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক। একজন নারী চিকিৎসক কর্তৃক পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে নিতম্বসহ শরীরের বেশ কিছু জায়গাতে পুরতান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে তা কত পুরাতন সে বিষয়ে তথ্য জানা যায়নি।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই বরুন চক্রবর্তী ওই দিনই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এক নারীকে আসামি করা হলে ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিহত বাসুদেব চক্রবর্তী স্থানীয় হারতা ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য নিখিল চক্রবর্তীর সহোদর ছিলেন। 

পরবর্তীতে বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতের কাছে পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন আদালতের বিচারক মাহফুজুর রহমান ওই নারী আসামির দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

গত ২ জুলাই রিমান্ড শেষে ওই নারীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় তাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে আদালত ওই নারীর কাছে খুঁড়িয়ে হাঁটার কারণ জানতে চান। পরে ওই নারী আদালতের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তখন আসামির অভিযোগ আমলে নিয়ে একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মাহফুজুর রহমান ওই নারীর শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। 

এরপর আদালত ওই নারীকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি নির্যাতন এবং হেফজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নির্যাতনের চিহ্ন ও নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন। পরে হাসপাতালের পরিচালক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। 

অপরদিকে আদালতে নারী আসামির ওই অভিযোগের কারণে উদ্ভুত পরিবেশ সামাল দিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্ত উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল ইসলামসহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত ওই দুই কর্মকর্তাকে থানা প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এমনকি ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। এমনকি আদালতে অভিযোগকারী নারীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে নিয়ে এই দুই কর্মকর্তাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। 

সূত্র মতে, জেলার আলোচিত এই হত্যা মামলার প্রধান আসামির (নারী) আদালতে বয়ানকে কেন্দ্র করে ক্লিন ইমেজের দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তবে ঘটনাবলী পর্যবেক্ষক মহল টুনুর খুনের রহস্য উন্মোচন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ওই নারীর অভিযোগমূলক বয়ান নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি থেকে রেহাই পেতে ধুরন্ধর মিনতি ওরফে মিতু নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। যদিও নিশ্চিত কিছু এখনি বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তথ্য অনুসন্ধানে যে আলামত পাওয়া গেছে তাতে হত্যা মামলার আসামি মিনতি ওরফে মিতুর নানা নাটকীয়তার প্রমাণ মিলেছে। 

উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি গোপন সূত্র জানায়, হত্যা মামলার আসামি ওই নারীকে যৌন হয়রানি ও মারধর তো দূরের কথা, তাকে স্পর্শই করা হয়নি। নারী পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে তাকে কক্ষে ডেকে এনে পরিদর্শক (তদন্ত) মৌখিক জেরা করেন। একপর্যায়ে ওই নারীর সাথে নিহত টুনুর মোবাইলে কথোপথন এবং অন্তরঙ্গ একাধিক ছবি প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলেই তিনি অসুস্থতার ভান করতে থাকেন। তখন ওই নারী অসুস্থ, এমনটি ভেবে পরিদর্শক (তদন্ত) তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু পুরো বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার পাশাপাশি হত্যা মামলা থেকে সেইভ সাইডে যেতে একমাত্র আসামি মিনতি ওরফে মিতু এমন কৌশল নিয়েছে বলে সূত্রটির দাবি।

আমারসংবাদ/এআই