মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি
জুলাই ৯, ২০২১, ০৯:৩০ এএম
বর্ষার ভরা মৌসুম। দেশের নদ-নদীগুলিতে উঁকি দিচ্ছে বন্যার পানি। আসছে বন্যা মোকাবেলায় জামালপুরের মেলান্দহে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের নৌকা তৈরিতে ব্যস্তসময় পার করছেন এ অঞ্চলের নৌ-কারিগররা। প্রতিবছর বন্যায় এ উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল ও রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ডুবে যায়। এ সময় যাতায়াতের জন্য নৌকাই একমাত্র এ অঞ্চলের মানুষের ভরসা। মৎস্যজীবীরাও এ সময় নৌকা ব্যবহার করে মাছ ধরার কাজে।
শুষ্ক মৌসুমের ৮ মাস পায়ে হেঁটে এবং বর্ষা মৌসুমের ৪ মাস নৌকায় চলাচল করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের। তাই আসছে বন্যা মোকাবেলায় এসব এলাকার পাড়ায় পাড়ায় নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। নানা জাতের কাঠ দিয়ে ১২ থেকে ১৪ হাত দৈর্ঘ্যরে প্রতিটি নৌকা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১২হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা। এসব নৌকা ব্যবহার হয় মাছ শিকার ও সীমিত সংখ্যক মানুষ পারাপারের জন্য।
এ ছাড়াও দূর পাল্লার যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয় ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা। ইঞ্জিন ও নৌকা ভেদে এগুলো তৈরিতে খরচ পরে ৩০হাজার থেকে শুরু করে দেড়-দুই লক্ষ টাকা অথবা ক্ষেত্রবিশেষ তারও উপরে।
সরেজমিনে উপজেলার ঘোষেরপাড়া, ঝাউগড়া, মাহমুদপুর, আদ্রা ও নাংলা ইউনিয়নের অংশবিশেষ ঘুরে দেখা গেছে, এসব অঞ্চলের কারিগররা নানা সাইজের, নানা ধরনের নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ নৌকার ফ্রেম তৈরি করছে, কেউ কাঠে পেরেক ঠুকে হাতুড়ি পেটাচ্ছে। আবার কেউ নৌকার রং করতে আলকাতরা লাগাতে ব্যস্ত।
উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের আমির্তি গ্রামের নৌকার কারিগর সামিউল মিস্ত্রি বলেন, বছরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় কাঠ ও টিনের বাড়ি-ঘর তৈরীর কাজ করলেও বন্যার এক-দুইমাস আগে থেকেই নৌকা তৈরীর কাজ শুরু করি। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ করি। এবছর করোনার (কোভিড-১৯) কারণে কঠোর লকডাউন থাকায় চাহিদামত কাঠ সংগ্রহ করতে পারি নাই। তাই নৌকার পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও সে তুলনায় নৌকা তৈরীর অর্ডার নিতে পারি নাই।
মাহমুদপুরের নৌ-কারিগর সুজন মিস্ত্রি বলেন, প্রতি বন্যা মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ টি নৌকা তৈরির অর্ডার পাই। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত পাঁচটি নৌকা তৈরির কাজ শেষ করেছি। হাতে আরও বেশকিছু অর্ডার আছে। ১২ থেকে ১৪ হাত প্রতিটি নৌকা বিক্রি করি ১৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে করে খরচ বাদে বেশ কিছু টাকা মুনাফা থাকে।
একই এলাকার এক নৌকাজীবি (মাঝি) গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতিবছর বন্যার সময় নৌকা দিয়ে অনেক মানুষ বিভিন্ন হাট-বাজারে আনা-নেয়ার কাজ করি। এছাড়াও এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াতের জন্য নৌকা ভাড়া দেই। এতে করে প্রতি মৌসুমে খরচ বাদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বলেন, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও তুলনামূলক নিম্ন অঞ্চল হওয়ার কারণে বন্যার পানিতে দুই-একটি রাস্তা ও বাড়িঘর বাদে প্রায় সমস্ত এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যায়। এ সময় যাতায়াতের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। এ কারণে আসন্ন বন্যায় নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌ-কারিগররা।
আমারসংবাদ/কেএস