Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সতী নদী খননে এসএএসআই গ্রুপের কোটি টাকার বালু ব্যবসা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 

জুলাই ৯, ২০২১, ০২:২০ পিএম


সতী নদী খননে এসএএসআই গ্রুপের কোটি টাকার বালু ব্যবসা

লালমনিরহাট জেলা ৫টি উপজেলা (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম) নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপর দিয়ে অনেক গুলো নদী প্রবাহিত হয়েছে যা তিস্তা, ধরলা, রত্নাই ও সতী-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী নদী নামে পরিচিত। সতী-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী নদীর আয়োতন মাত্র ৩৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার এবং নদীটি সর্পিলাকার। বর্তমানে নদীটির বেশির ভাগ যায়গা ভরাট হয়ে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় বন্যা ও সুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় নদী পাড়ের জমি গুলো চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে ওঠে।

নদী পাড়ে বসবাসরত মানুষের বন্যা থেকে বাঁচাতে ও সুষ্ক মৌসুমে ফসলি জমি আবাদে কৃষকদের সহায়তার জন্য লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) নদীটি খননের উদ্যোগ নেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সতী নদীর ১৭ কিলোমিটার খননের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্টান এসএএসআই গ্রুপ।

একই বছরের ডিসেম্বর মাসে এসএএসআই গ্রুপের এজেন্ট হাতিবান্ধা উপজেলার পারুলিয়া বাজারের রেদয়ান আহমেদ সতী নদী খননে এলাকা ভিত্তিক সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করে।

প্রথমে ভেকু (এসকেভেটর) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু করে। শুরুটা ভাল হলেও কাজ চলা কালিন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট রেদয়ান আহমেদ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ম্যানেজ করে কাজ বাবদ কোটি টাকা তুলে নেয়।

এরই মাঝে গত বছরের মার্চ মাসে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সতী নদী খনন কাজ হজবরল করে বন্ধ করে দেয়। নদী খননের সাব-ঠিকাদারদের কোন টাকা না দিয়ে তাদের জানায় আগামি অর্থ বছর কাজ করব আপনারা চিন্তা করিয়েন না।

নদী খননের জন্য ভাড়া করে আনা ভেকু (এসকেভেটর), নাইট গার্ড ও লেবারদের পাওনা টাকা না দিতে পারায় এবং টাকা ধার করে নদী খননের কাজ করে ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সাব-ঠিকাদাররা দেউলিয়া হয়ে যায়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজনের ভাই প্লাবন আহমেদ বলেন, এসএএসআই গ্রুপের এজেন্ট রেদয়ান আহমেদ আমাকে ৪ কিলোমিটার নদী খননের কাজ দেয়। কিন্তু করোনার অজুহাতে কাজ বন্ধ করে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমি অনেক টাকা পাই।

স্বর্নামতী ব্রীজ এলাকার সাব-ঠিকাদার বাংটু কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, রেদয়ান আহমেদ আমাদের কে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমি প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা পাই পানাদারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কয়েক দিন কাজ করলেও আবারও তা বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরেজমিন তদন্তে গিয়ে পাওয়া যায় আরো ভয়াবহ চিত্র, সতী নদীর ১৭ কিলোমিটার জুড়ে বালু ও মাটি বিক্রয়ের মহোৎসব চলছে। ভাদাই, সারপুকুর, খুনিয়াগাছ, হারাটি ও রাজপুর ইউনিয়নে কয়েকটি যায়গায় পয়েন্ট করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রলিযোগে মাটি বিক্রয় করা হচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কমিশন ভিত্তিতে যার একটা ভাগ পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
মাটি ও বালু বিক্রয়ের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোক তাদের ভয়ে কেও মুখ খুলতে চায় না।

গত কাল ৮ জুলাই রাজপুর ইউনিয়নে রাজপুর বাজারের পাশে সতী নদীর ধারে গিয়ে দেখা যায় সালাম মেম্বারের নেতৃত্বে গত বছরের ড্রেজিংকৃত মাটি ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে তুলা বালু বিক্রয় করা হচ্ছে। এমনকি নদীর স্লোভ (পাড়) ট্রলি ঠেকিয়ে মাটি বিক্রয় করা হচ্ছে। গত ১ বছর ধরে কোটি টাকার মাটি বালু বিক্রয় করা হয়েছে যা জানে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাজপুর এলাকার সতী নদী পাড়ের আনিস, ছালাম ও ময়না বেগম অভিযোগ করে বলেন, এভাবে মাটি বিক্রয় করায় আমরা আরো বেশি হুমকিতে পড়লাম। যে কোন মুহূর্তে বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে আমাদের বসতবাড়ী। আপনি দেখতেইতো পাচ্ছেন রাজপুর টু তিস্তার পাকা সড়ক কিভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ দিয়ে কোন কাজ হয় না।কারন যেই স্যার আসে তারা কানে কানে কি যেন বলে আর স্যাররা চলে যায়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট রেদয়ান আহমেদ কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, দেখেন আমি রংপুরে থাকি আমার ঔ সাইড নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি। আমি কাজটি শেষ করব। কবে করবেন এবং লোক দিয়ে নদীর মাটি কেন বিক্রয় করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতিরিক্ত মাটি বিক্রয় করা হচ্ছে। আর তারা আমার কাছে টাকা পায় আমি বললে আমার কথা শোনে না।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের সেল ফোনে বলেন, গত বছর তিনি কাজটি শুরু করেছিলেন কিন্তু করোনার অযুহাতে সতী নদী খনন কাজ বন্ধ করে রাখেন। এ বছর কাজ শেষ না করলে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। তবে তিনি কমিশনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। মাটি ও বালু বিক্রয় কেন করছে সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমাদের লোকবল কম। তাদের নিষেধ করা হয় তার পরও তারা কেন যে আমাদের কথা শোনে না।

লালমনিরহাট পাওবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সেল ফোনে বলেন, ঠিকাদারকে কাজ করার বিষয়ে চাপ দেয়া হয়েছে। নদী খনন করার জন্য ঠিকাদারকে কেন বেশি টাকা দিলেন আর সেই টাকা ও কাজ এক বছরেও কেন বুঝে নিলেন না এবং নদীর মাটি ও বালু কেন বিক্রয় করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

আমারসংবাদ/কেএস