কামরুজ্জামান বাঁধন, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)
জুলাই ১০, ২০২১, ০৮:২৫ এএম
আসন্ন কোরবানির ঈদে রাজধানী ঢাকার গাবতলী হাট মাতাতে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে প্রস্তুত ৩০ মণ ওজনের একটি পশু। পশুটির মালিক ভালোবেসে এর নাম দিয়েছেন ‘বরিশালের বস’।
গত ৩ বছর যাবত পরম মমতায় এ পশুটিকে লালন পালন করা হচ্ছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের সততা এগ্রো ফার্মে। ৩০ মণ ওজনের ‘বরিশালের বস’ এর মালিক এটির দাম হেঁকেছেন ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
৩ বছর পূর্বে ৯৪ হাজার টাকায় পাকিস্তানি শাহী ওয়াল জাতের দেড় বছর বয়সী এ গরুটি দিনাজপুর থেকে কিনে মির্জাগঞ্জে নিয়ে আসেন সততা এগ্রো ফার্মের মালিক মোঃ ওয়াদুদুজ্জামান। ফার্মে আনার পর গরুটিকে ভালোবেসে নাম দেন ‘বরিশালের বস’। গত তিন বছর যাবত তিনি গরুটিকে পরম মমতায় লালন পালন করেন। কোন প্রকার রাসায়নিক খাবার এবং মোটাতাজাকরন ইনজেকশন না দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় ভুট্টা, ধান, ডাল, গম সহ নিজস্ব জমিতে চাষ করা অর্গানিক ঘাস খাইয়ে বড় করা হয়েছে বরিশালের বসকে।
লাল রংয়ের প্রায় ৫ ফুট উচ্চতার বরিশালের বসের বর্তমান ওজন প্রায় ৩০ মণ (১১শত ৫০ কেজি)। বরিশালের বস ছাড়াও ২৮মণ ওজনের পাকিস্তানি শাহী ওয়াল ক্রস এবং নেপালি জাতের আরও ২টি গরু কোরবানীতে বিক্রির জন্য লালন পালন করা হচ্ছে এ ফার্মে। অন্য দুটির নাম দিয়েছেন বরিশালের বস টু এবং বরিশালের বস থ্রি। মালিক এর দাম হেঁকেছেন যথাক্রমে ১৭ লক্ষ ও ১৫ লক্ষ টাকা।
এছাড়াও বিক্রির জন্য বিভিন্ন জাতের আরও ২১টি পশু রয়েছে। বরিশালের বসকে দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে লোক আসছেন এ ফার্মে।
‘বরিশালের বস’ এর বিশেষ পরিচর্যায় নিয়োজিত কর্মচারী মোঃ খোকন বলেন, এ গরুটিকে তিনবেলা ভুট্টা,ডাল,ধান,গম,দানাদার ও নিজস্ব জমিতে চাষ করা অর্গানিক ঘাস খাইয়ে বড় করা হয়েছে। রোগ-ব্যাধিতে যাতে এটি আক্রান্ত না হয় সে জন্য স্থানীয় পশু ডাক্তারগণ সার্বক্ষণিক ফার্মে এসে খোঁজ খবর নেয়া সহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।
সততা এগ্রো ফার্মের পরিচালক রবিউল ইসলাম রুবেল জানান, ‘বরিশালের বস’কে ঢাকার গাবতলীতে নিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ জন্য গাবতলীতে জায়গা রিজার্ভও করা হয়েছে। সরকারের দেয়া কঠোর লগডাউন উঠে গেলে ঢাকায় নিয়ে যাবো। এছাড়া মির্জাগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা ফার্মে এসে গরু দেখে পছন্দ করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ১৬ লাখ টাকার ১৭ টি গরু বিক্রি করা হয়েছে। আশা করছি গাবতলীর হাটে “বরিশালের বস” এর ভাল মূল্য পাবো।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ ফারুক খাঁন, সাইফুল ইসলাম ও নাসির সিকদার বলেন, বরিশালের বস নামের এ পশুটি আমাদের উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গাবতলীর হাটে এ পশুটিকে দেখে বরিশাল বিভাগের অনেক খামারী এ জাতের গরু পালনে উৎসাহিত হয়ে লালন পালন করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবে এবং বরিশাল বিভাগের নাম উজ্জল করবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, সততা এগ্রো ফার্মে বেড়ে ওঠা ‘বরিশালের বস’কে দেখে অন্যান্য খামারীরাও এ জাতের পশু পালনে আগ্রহ প্রকাশ করছে। উপজেলার ২৮১টি ছোট বড় খামারি রয়েছেন।
কোরবানীর আগে লগডাউন প্রত্যাহার না হলে খামারীরা যাতে নিরাপদে গরু বিক্রি করতে পারেন সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদ্যোগে ‘মির্জাগঞ্জ উপজেলা অনলাইন পশুর হাট’ নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম করেছি, এ প্লাটফর্মে প্রতিদিন ৭০টি পশুর ছবি, মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার ও সম্ভাব্য মূল্য উল্লেখ করে বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্মে আপলোড দেয়া হচ্ছে।
আশা করছি উপজেলার খামারীরা অনলাইন প্লাটফর্মে ভালো সুবিধা পাবেন। ইতোমধ্যে অনলাইন হাট থেকে ১০টি গরু বিক্রি করা হয়েছে। এতে বেশ ভালো সাড়াও পাচ্ছেন বলে খামারীরা জানান।
আমারসংবাদ/এআই